নদীর পাড়ে পাইপে আসছে পানি, ‘অলৌকিক’ ভেবে পান করছে মানুষ
ছোট যমুনা নদীতে পানি খুবই কম। এরই মধ্যে নদীতে পুরাতন একটি সেতুর পিলারের নিচের সুড়ঙ্গ দিয়ে পাইপে বয়ে আসছে পানি। আর এই পানি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। অলৌকিক পানি মনে করে প্রতিদিনই নারী-পুরুষেরা সেখানে জড়ো হচ্ছেন। আর তাদের সাথে আনা বোতল কিংবা জগ ভরে পানি সংগ্রহ করছেন। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের আশায় সেই পানি পান করছেন তারা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কুঠিবাড়ি পুরাতন সেতুর দক্ষিণ পাশে এমন ঘটনা ঘটেছে। সেখানে সপ্তাহের বেশি সময় ধরে একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে অঝোরে পানি আসছে। আর প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারী-পুরুষসহ সকল বয়সী মানুষেরা এসে বোতলে ভরে ওই পানি নিয়ে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ছোট যমুনা নদীর কুঠিবাড়ি এলাকায় পাশাপাশি দুটি সেতু রয়েছে। নতুন সেতু হওয়ার পর পুরাতন সেতু পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা পুরাতন ওই সেতুর দক্ষিণ পাশের পিলার সংলগ্ন একটি ছোট সুড়ঙ্গ হয়ে পাইপ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। প্রায় চার হাত লম্বা একটি পাইপ দিয়ে পানি এসে নদীতে পড়ছে। সেখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সী নারী-পুরুষ যাচ্ছে। কেউ আনছেন ব্যাগ ভর্তি বোতল, আবার কেউ আনছেন জগ, কেউবা আসছেন দেখতে, আবার অনেকেই সেখানেই এসে পানি পান করছেন। সেখানে নিয়ে আসা বোতল ও জগ ভর্তি করে পানি নিয়ে মানুষ চলে যাচ্ছে। ওই পাইপ দিয়ে কখনো পরিষ্কার পানি আবার কখনও ময়লাযুক্ত পানি নদীতে পড়ছে।
সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পুরাতন সেতুর দক্ষিণ পাশের একটি পিলারের নিচে সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ফ্রেশ পানি বের হচ্ছিল। কোনো এক ব্যক্তি ওই পানি পান করেন। পরে তিনি পানি পান করে উপকার পেয়েছেন বলে সেখানে জানিয়ে দেন। এরপর থেকে যতই দিন যাচ্ছে ততই সেই পানি নিতে লোকজনের ভিড় বাড়ছে। সুড়ঙ্গ দিয়ে কখনো স্বচ্ছ পানি আবার কখনো বালু ও ময়লাযুক্ত পানি আসছে। পানির উৎস সর্ম্পকে কেউ সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
তবে বালুর জোয়ারের পানি বলে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা ধারণা করছেন। এদিকে অপরিশুদ্ধ পানি পান করলে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া-কলেরা-টাইফয়েড ও জন্ডিস হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
খনজনপুর এলাকার বকুল হোসেন বলেন, হঠাৎ করে এখানে পানি বের হচ্ছে। এই কথা শুনে প্রতিদিন অসংখ্য লোক এসে পানি নিয়ে যাচ্ছে। আমিও এখান থেকে পানি নিয়ে গিয়ে খেয়েছি, ভালোই। প্রথম প্রথম ফ্রেশ পানি বের হচ্ছিল, এখন একটু ঘোলা। এখন এই পানি নিচ থেকে বের হচ্ছে, জোয়ারের পানি।
জোয়ারের পানি খেলে ব্যথা ভলো হয়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন সবাই তো নিয়ত করেই খাচ্ছে যে পেটে ব্যথা ভালো হচ্ছে। পরে আমিও খেয়েছি।
জোৎসা নামে এক নারী বলেন, এই পানি খেয়ে অন্য মানুষের কি হচে (হচ্ছে) জানি না, কিন্তু আল্লাহপাক হামার (আমার) ব্যদনা (ব্যথা) কমাচে (কমেছে)। আমি দুইবার পানি নিয়ে গিয়ে খাচি (খেয়েছি)। এইবার দিয়ে তিনবার হবে।
উত্তর জয়পুর গ্রামের খাতিজা বেগম বলেন, সবার মুখে শুনে আমি পানি নিতে আচি। আগে তো আসিনি, এইবার প্রথম। এই পানি দিয়ে কার কি অসুখ-বিসুখ আছে, আল্লাহ মাফ করে দেবে, যার জন্য আমি আজক্যা নিতে আচি।
একই গ্রামের মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, গত ১৫ থেকে ২০দিন ধরে পানি বের হচ্ছে। এটা জোয়ারের পানি, তেমন কিছু না। এই পানি দিয়ে কোনো উন্নতি হবে না। মানুষ এমনি বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এটি করছে।
অনেকেই বলছে ব্যথা ভালো হচ্ছে এটি আপনি কি মনে করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি ভুয়া। এখানে জোয়ারের পানি হতেই পারে। তেমন কিছু না। পানি খাওয়া যায়, তবে কোনো উপকার হবে না। ফ্রেশ এবং ঠান্ডা পানি মনে করে খাওয়া যায়।
জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছু লোক ভুয়া কথা ছড়িয়ে এমনটা করেছে। এ রকম পানি পান করলে পেট খারাপ, ডায়রিয়া হওয়াসহ অন্যান্য রোগ হতে পারে। এখন নদীতে বিভিন্নভাবে পানি আসে। যদি খারাপ পানি আসে, আবার ওই পানি পান করলে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
চম্পক কুমার/আরএআর