নেত্রকোণায় সন্তানকে হত্যার দায়ে মো. এরশাদ মিয়া (৩৯) নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আরও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৪ মে) বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এই দণ্ডাদেশ দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. এরশাদ মিয়া নেত্রকোণা সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের মো. আব্দুল জব্বারের ছেলে।

আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি আসামি মো. এরশাদ মিয়ার স্ত্রী মোছা. আফরোজা আক্তার নেত্রকোণা মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, আনুমানিক ১০ বছর আগে বিবাদী এরশাদ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর তিনি স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করতেন। তাদের প্রথম পুত্রসন্তানের নাম মো. শাফায়াত হোসেন আরাফ (৮)। দ্বিতীয়বার প্রসবের সময় একটি সন্তান মৃত্যুবরণ করে। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের কারণে আসামি এরশাদ মিয়া তার স্ত্রী রোজিনা আক্তারকে প্রায় সময় নির্যাতন করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিয়ের ছয় বছর পর রোজিনা আক্তার নেত্রকোণা সদরের কান্দুলিয়া এলাকায় তার মামা লিটন মিয়ার বাড়িতে চলে যান এবং সেখানে বসবাস করতে থাকেন। রোজিনা তার মামার বাড়ি থাকাকালীন সময়ে তার স্বামী তাকে মোবাইল ফোনে কল করে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করতেন।

মামলায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর রোজিনা আক্তার তার স্বামী এরশাদ মিয়াকে তালাক দেন। এতে বিবাদী ক্ষিপ্ত হয়ে তার মামাবাড়ি কান্দুলিয়াতে গিয়ে অভদ্র ভাষায় তাদের গালিগালাজ করেন। রোজিনা আক্তার তার মামার বাড়ির কাছে স্বপ্ননীড় গার্মেন্টসে সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন।

২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি আনুমানিক সকাল ৮টায় রোজিনা গার্মেন্টসে কাজ করা অবস্থায় জানতে পারেন তার মা চিৎকার চেঁচামেচি ও কান্নাকাটি করছে। তখন তিনি গার্মেন্টস থেকে বের হয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান, তার মায়ের বসত ঘরের বারান্দার রুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো। ভেতরে আসামি এরশাদ মিয়া তার আট বছরের সন্তান আরফকে মারপিট করতে থাকেন। এমতাবস্থায় স্থানীয় লোকজন বারান্দার রুমের দরজা ভাঙার চেষ্টা করেও ভাঙতে পারেননি। দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে বিবাদী নিজে আত্মহত্যা করবে বলে জানায়।

এরমধ্যে খবর পেয়ে নেত্রকোণা মডেল থানার টহল পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে। বিবাদী পুলিশের কথায় রুমের দরজা খুলে দেযন। সেখানে উপস্থিত সবাই দেখতে পান ভেতরে থাকা চৌকিতে আরাফ মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তার পায়ের অংশ চৌকির পাশ দিয়ে ঝোলানো ছিল। তার গলায় জখমের চিহ্ন ছিল এবং জিহ্বা কামড়ানো অবস্থায় ছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

উক্ত ঘটনায় পুলিশ আসামিকে আটক করে এবং নিহত সাফায়াত হোসেন আরাফের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে, ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। দীর্ঘ চার বছরের শুনানি ও ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামির উপস্থিতিতে আদালত আজকে এই রায় প্রদান করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল হাশেম এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট পুরবী কুন্ডু।

চয়ন দেবনাথ মুন্না/এএমকে