মুনাফার টাকা নয়, জমাকৃত টাকা ফেরত চাই, স্লোগানে এহসান গ্রুপ পিরোজপুর বাংলাদেশ লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাগীব আহ্সানের কাছে জমাকৃত টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে পিরোজপুরের কর্মী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

শনিবার (৫ জুন) দুপুরে শহরের সিও অফিস সড়কে এহসান গ্রুপ পিরোজপুর বাংলাদেশ লিমিডেট এর প্রধান শাখার সামনে বিক্ষোভ করে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ও এহসান গ্রুপে চাকরিরত কর্মীরা।

এ সময় বিক্ষাভ সমাবেশ বক্তব্য রাখেন, এহসান গ্রুপ পিরোজপুর বাংলাদেশ লিমিটেডের এর ফিল্ড অফিসার (এফও) রফিকুল ইসলাম, ফিল্ড অফিসার (এফও) হারুন অর রশিদ, ফিল্ড অফিসার (এফও) জালাল উদ্দিন, ফিল্ড অফিসার (এফও) নাসির উদ্দিন, ভুক্তভোগী গ্রাহক মাহজাহান গাজী, আব্দুস সালাম ও মোরহমান হাওলাদার।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, এহসান গ্রুপ পিরোজপুর বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাগীব আহ্সান তাদের জমাকৃত টাকা আত্মসাতের জন্য এহসান গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে ফেলছে। জমাকৃত টাকা আত্মসাত ও গ্রাহকের টাকায় নির্মিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তিনি নিজের আত্মীয়-স্বজনদের পাওনাদার বানিয়ে সেই সম্পদ তাদের নামে লিখে দিচ্ছেন। এছাড়া এহসান গ্রুপ অবৈধ্যভাবে অন্যের নাম দিয়ে বিপুল পরিমাণে টাকা আত্মসাৎ করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করছে। 

এদিকে জমাকৃত মূল টাকা ফেরত না পেয়ে অনেক মানুষ অসহায়ের মতো জীবন-যাপন করছে। তাই কোনো মুনাফার টাকা নয় জমাকৃত আসল টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সাধারণ ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) রাতে পিরোজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। এ সময় প্রতারিত প্রায় ৩০ জন আলেম-উলামা উপস্থিত থেকে লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা জানান, পিরোজপুর সদরের খলিশাখালী এলাকার আব্দুর রব খানের বড় ছেলে মুফতি রাগীব আহসান ২০১০ সালে এহ্সান রিয়েল এস্টেট নামে একটি এমএলএম কোম্পানি শুরু করেন। পরে এটি এহ্সান গ্রুপ পিরোজপুর বাংলাদেশ নামে পরিচিতি পায়। এর অধীনে রাগীব গড়ে তোলেন ১৭টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহ্সান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লি.,এহ্সান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমেটেড, নূর এ মদিনা ইন্টা: ক্যাডেট একাডেমী, জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদরাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক),আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহ্সান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি:, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহ্সান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহ্সান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহ্সান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহ্সান, পিরোজপুর গবেষণাগার ও এহ্সান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে। রাগীব মক্কার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম এবং পিরোজপুর, বাগেরহাট, ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক ও হিফজখানার ছাত্রদের এনে বড় বড় ইসলামী সভা করতেন। সেখানে ইমামরা বলতেন, এহ্সান গ্রুপ শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয়। এখানে টাকা রাখলে অধিক লাভসহ তা ফেরত পাওয়া যাবে। প্রতারিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। এ সময় রাগীব কোরআন ও নবীর সুন্নাহর দোহাই দিয়ে মানুষদের আকৃষ্ট করতেন। আলেম-উলামা ও মাদরাসার শিক্ষকদের ব্যবহার করার কারণে এহ্সান গ্রুপে প্রায় এক লাখ মানুষ গ্রাহক হয়। তবে এই ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছে বেশির ভাগ গ্রাহক। তাদের মধ্যে আছে অবসরপ্রাপ্ত বহু স্কুল শিক্ষক, চিকিৎসক, সেনা ও পুলিশ সদস্য আর সাধারণ মানুষ। অধিক লাভের আশায় পৈতৃক ভিটা বিক্রি করেও বহু সাধারণ মানুষ হারিয়েছে সর্বস্ব।

সংবাদ সম্মেলনে মুফতি শহিদুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, এহ্সান গ্রুপ প্রায় এক লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে। লভ্যাংশ তো দূরে থাক, আসল টাকা চাইতে গেলে রাগীব তার পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মারধর, হুমকি-ধমকি, এমনকি এসিড সন্ত্রাস পর্যন্ত করেছেন। এ পর্যন্ত নানা ভয়ভীতি এবং শারীরিক লাঞ্ছনা উপেক্ষা করে একাধিক মামলা ও অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে তিনি গডফাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রভাবশালী কিছু গ্রাহককে চেকের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এহ্সান গ্রুপের অ্যাকাউন্টে টাকা নেই বলে চেক গ্রহণ করেনি। রহস্যজনক কারণে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রশাসনের কারো কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

ভুক্তভোগী ডা. বাবুল জানান, এক লাখ টাকার বিপরীতে মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা লাভের আশায় তিনি এহ্সান গ্রুপে ২৮ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এ টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাকে খলিশাখালী দারুল উলুম মাদরাসার মধ্যে নিয়ে তার শরীরে এসিড ঢেলে দেন রাগীবের ভাইয়েরা। হুমকি দেন, এ নিয়ে মামলা করলে টাকার সঙ্গে জীবনও চলে যাবে। এসিডের ক্ষত বয়ে বেড়ালেও তিনি আর মামলা করতে সাহস পাননি। 

পিরোজপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন পাঁচ লাখ টাকা জমা রাখেন। এই টাকা চাইতে গেলে রাগীব টালবাহানা শুরু করেন। জীবনের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিনি এখন মৃত্যুশয্যায়।

আবীর হাসান/এমএএস