শুকনো খাবারে দিন যাচ্ছে ভারতীয় চালকদের
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোধে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে বাড়ানো হয়েছে তৎপরতা
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু। ইতোমধ্যে এই জেলায় করোনার ভারতীয় ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) উপস্থিতি মিলেছে। জেলা প্রশাসনের চলমান ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের মধ্যেও ভারতীয় ধরন শনাক্তদের বাড়ি আলাদাভাবে লকডাউন করা হয়।
এসব বাড়ির সামনে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোধে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দরে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সেখানকার শ্রমিকদের পরিমাণ কমিয়ে অর্ধেক করা হয়।
বিজ্ঞাপন
ভারত থেকে আসা ট্রাকচালকদের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে লাল ফিতা দিয়ে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে প্রথমে ভারতীয় ট্রাকচালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসকরা। প্রবেশের পরপরই ভারতীয় ট্রাক জীবাণুমুক্ত করার লক্ষ্যে স্প্রে করানো হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এরপর থার্মোমিটার দিয়ে চালক ও সহকারীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরে পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের প্রবেশমুখে ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীদের লাল ফিতা পরিয়ে দেওয়া হয়।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের শ্রমিক আব্দুস সামাদ বলেন, পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের সীমানার বাইরে বন্দর এলাকায় ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীদের চলাফেরা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। আগে তারা প্রবেশের পর বাইরে ঘোরাঘুরি করতেন। কিন্তু লাল ফিতা দেওয়ার পর তা আর করতে পারে না।
শ্রমিক নূরুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগে তারা (ভারতীয় ড্রাইভার ও হেলপাররা) গাড়ি ভেতরে রেখে বাইরের বিভিন্ন দোকানে ও হোটেলে আড্ডা দিতেন। বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশতেন। হোটেলে বসে একসঙ্গে খাবার খেতেন। কিন্তু এখন প্রশাসন কঠোর হওয়ায় তারা এসব আর করতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভারতীয় ড্রাইভার বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এখানকার লোকজন খুব কড়াকড়ি শুরু করেছে। আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হচ্ছে। বাইরে বের হতে দেয় না। পণ্য খালাস না হলেও সন্ধ্যার মধ্যে ভারতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এমনকি ভারত থেকে আনা শুকনো খাবার খেয়েই দিন পার করছি।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চলছে জানিয়ে পানামা পোর্ট লিংকের ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ২০০-২৫০ ভারতীয় পণ্যবোঝাই ট্রাক সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করছে। লাল ফিতা পরিয়ে দেওয়ায় পানামার সীমানার বাইরে যেতে পারেন না চালকরা।
তিনি আরও বলেন, তারা বাইরে হোটেলে খেতে যেতে পারেন না। নিজেদের আনা শুকনা খাবার খেয়েই তারা পানামার ভেতরে অবস্থান করেন। ট্রাকচালকদের বন্দরে রাতযাপন করতে দেওয়া হয় না। সন্ধ্যার আগেই তাদের ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মাল খালাস করার পর মুঠোফোনে তাদের ডাকা হয়। তখন তারা এসে ট্রাক নিয়ে ভারতে চলে যান।
পানামা ইয়ার্ডের ভেতরে লোড-আনলোডে নিয়োজিত ৩০০ শ্রমিক মাস্ক পরিধান করে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছেন। পণ্যবোঝাই ভারতীয় ট্রাকের প্রবেশ কমিয়ে আনতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়, যা আগে ছিল সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এছাড়াও সপ্তাহে একদিন কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য চার সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল টিম নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে শনিবার (৫ মে) পর্যন্ত ভারতে আটকে পড়া ৯২ বাংলাদেশি সোনামসজিদ স্থলবন্দর হয়ে দেশে ফিরেছেন। তাদের শিবগঞ্জ উপজেলা ডাকবাংলো, জেলা শহরের হোটেল আল নাহিদ, হোটেল রোজ ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন শেষে ২৪ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
জাহাঙ্গীর আলম/এমএসআর