রংপুর বিভাগে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে বেপরোয়া চলাফেরায় বেড়েই চলছে করোনার সংক্রমণ। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। স্বাস্থ্যবিভাগ ও প্রশাসনের নীরবতা এবং জনসাধারণের উদাসীনতায় রংপুরে ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে করোনা। 

চলতি জুন মাসের প্রথম পাঁচদিনে (১ থেকে ৫ জুন) রংপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হয়েছেন ৩৭৭ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ১৫৮ জন রোগী।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় বলছে, জুনের প্রথমদিনে বিভাগে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন মারা যান। একই দিনে করোনা পজিটিভ ৭৮ জন রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২ জুন ৪ জন, ৩ জুন ৫ জন, ৪ জুন ৩ জন এবং ৫ জুন ৫ জনসহ মোট ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গেল পাঁচদিনে ১ হাজার ৯২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে বিভাগের আট জেলায় ৩৭৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে বিভাগের আট জেলায় নতুন করে ৯৩ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ২০ জন রোগী। এ নিয়ে রংপুর বিভাগে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪১২ জনে পৌঁছেছে।  

রোববার (০৬ জুন) বিকেলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী এসব তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভাগে বর্তমানে ১৯ হাজার ৩৮৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮ হাজার ২ জন।

স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, শনিবার (৫ জুন) বিভাগের আট জেলার ৩৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নতুন করে ৯৩ জন করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের দিনাজপুুরে ৪০, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৭, রংপুরে ১৫, কুড়িগ্রামে ৯, লালমনিরহাটে ৭, গাইবান্ধায় ৪ এবং নীলফামারী জেলায় ১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ৩, দিনাজপুরে ১ ও কুড়িগ্রামে ১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়।

ডা. আহাদ আলী জানান, শনিবার (৫ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনাজপুুর জেলায় করোনায় ৫ হাজার ৯৮৮ জন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ১৫২ জনে রয়েছে। রংপুর জেলায় ৫ হাজার ৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১০০ জনের। ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ হাজার ৭৪২ জন আক্রান্ত, ৪৪ জনের মৃত্যু, গাইবান্ধা জেলায় ১ হাজার ৭৮০ জন আক্রান্ত, ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া নীলফামারী জেলায় ১ হাজার ৫৯০ জন আক্রান্ত ও ৩৬ জনের মৃত্যু, কুড়িগ্রাম জেলায় ১ হাজার ২৫৫ জন আক্রান্ত ও ২২ জনের মৃত্যু, লালমনিরহাট জেলায় ১ হাজার ১০৮ জন আক্রান্ত ও ১৫ জনের মৃত্যু এবং পঞ্চগড় জেলায় ৮৪৪ জন আক্রান্ত ও ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সম্প্রতি সারাদেশের মধ্যে ৩১ জেলাকে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ জেলা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর ও নীলফামারী জেলা রয়েছে। যার মধ্যে রংপুরের অবস্থান ২৭ নম্বরে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর/জেএস