কানাডায় করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। গতবছর মার্চ মাসে প্রথম ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেল। 

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭৩৪ জনে। মৃত্যু হয়েছে ২৫ হাজার ৪৭৮ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৮ জন। কানাডায় প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে তা আগের তুলনায় কম। 

এদিকে কানাডা ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভ্যাকসিনের কোনো ঘাটতি যেন না পড়ে সেজন্য কয়েক কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করেছে। চুক্তিবদ্ধ হয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কয়েক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সুরক্ষিত রাখার কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

কানাডার চিফ পাবলিক হেলথ অফিসার ডা. থেরেসা ট্যাম বলেন, কানাডায় করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে। নতুন সংক্রমণের সংখ্যাও কমতে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জনস্বাস্থ্য নিষেধাজ্ঞাগুলো সহজ করার সময় এখনও আসেনি। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ইঙ্গিতগুলো হলো- কানাডাজুড়ে জনস্বাস্থ্য বিধিনিষেধের সংযোজন এবং টিকা দেওয়ার ক্রমবর্ধমান হার বৃদ্ধির জন্যই নতুন শনাক্ত সংখ্যা সীমাবদ্ধ রাখতে ‘অত্যন্ত কার্যকর’ প্রমাণিত হচ্ছে।

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে পরিচিত কানাডায় রয়েছে ১০টি প্রদেশ ও তিনটি টেরিটরি। কানাডার প্রধান চারটি প্রদেশ ক্যুইবেক, অন্টারিও, ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও আলবার্টা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশী রোগীই এ চারটি প্রদেশের।

অন্যদিকে গতবছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ও নিরাপদভাবে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্নার ভ্যাকসিন প্রয়োগ। কানাডিয়ানরা সাদরে এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করছেন।

বিশিষ্ট কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ আর বিধিনিষেধ অনুসরণে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতায় দীর্ঘমেয়াদি মহামারি কাটিয়ে সুদিনের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে কানাডা। 

তিনি আরও বলেন, দ্রুত গতিতে ভ্যাক্সিনেশন কাভারেজ আর করোনার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ছাড়া অন্যকোনো বিকল্প পথ খোলা নেই। দ্রুত করোনা পরিস্থিতির উন্নয়ন সে কথাটিই প্রমাণ করে। জীবন-জীবিকার উন্নয়ন আর দীর্ঘ শিক্ষা বিরতি সামাজিক ও মনোজাগতিক ক্ষেত্রে যে প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তা থেকে উত্তরণে সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার।

এপর্যন্ত কানাডায় ২২.৩ মিলিয়ন ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। ৫৪ শতাংশের বেশি কানাডার মানুষ এক ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে। ক্যুইবেকের ৫৬ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে।

করোনাভাইরাসের ভয়াবহ তাণ্ডব কানাডার ক্যুইবেক প্রদেশে কমে আসায় ২৮ মে থেকে মন্ট্রিয়লসহ কুইবেকের অন্যান্য শহরে রাত্রিকালীন কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে খোলা হচ্ছে রেস্টুরেন্টগুলোর টেরাস। মুভি থিয়েটার ও স্টেডিয়ামগুলোও খুলে দেওয়া হচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে। দুই পরিবারের আটজন সদস্য নিয়ে ব্যাকইয়ার্ডে পার্টি করা যাবে।

আগামী ৩১ মে রেস্টুরেন্টের ডাইনিং, জিম খুলে দেওয়া হবে কিছু বিধিনিষেধ বহাল রেখে। ওইদিন থেকে হাই স্কুলগুলোর উঁচু ক্লাসের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে পুরোদমে প্রাতিষ্ঠানিক ক্লাস শুরু হবে।

অন্যদিকে কানাডায় প্রবেশ ও দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণকে নতুন করে সীমিত করার কথা ভাবছে সরকার। ইতোমধ্যে কানাডা, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ফ্লাইট স্থগিতাদেশ আরও ৩০ দিন বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর কঠোরভাবে গুরুত্বারোপ করা করেছে দেশটির সরকার।

এসএসএইচ