চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে আহত গার্মেন্টসকর্মী ইমরান হোসাইন  (৩০)। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনদের মধ্যে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার (১৪ জুন) দুপুর আড়াইটায় ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লী ইউনিয়নের চপই মোহনপুর নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

এর আগে গতকাল রাতে গাজীপুর জেলার নিজ বাসায় ইমরান হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নান্দাইল উপজেলার চপই মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. ইসলাম উদ্দিনের ছেলে। পেশায় তিনি একজন গার্মেন্টসকর্মী ছিলেন।    

নান্দাইলের বাসিন্দা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক আশিকিন আলম রাজন ঢাকা পোস্টকে খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ২৮ জুলাই গাজীপুর জেলার আব্দুল্লাহপুর তারগাছ এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন ইমরান হোসাইন। তখন তার বুকে, হাতে এবং চোখ স্প্লিন্টার জখম হয়। সেই থেকে ঘটনাটি তিনি কাউকে না জানিয়ে নীরবে সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করেন। ফলে পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে অবশেষে মারা যান ইমরান।

আশিকিন আলম রাজন আরও জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই ইমরানের ভেতরে আওয়ামী লীগ ফিরে আসার ভয় ছিল। এ কারণে তিনি ঘটনাটি কাউকে জানাননি। এমনকি একজন আহত জুলাইযোদ্ধা হিসাবেও নিজের নাম তালিকাভুক্তির আবেদন করেননি। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সংকটে তিনি মারা গেছেন।  

এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পরিবারের কোনো সদস্যদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইমরান গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি গোপন রেখেছিল। ফলে একমাত্র স্ত্রী ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা বিষয়টি তেমনভাবে আগে অবগত ছিল না। মৃত্যুকালে ইমরান হোসেন স্ত্রী ও এক সন্তান রেখে গেছেন বলেও জানান স্থানীয়রা।

নান্দাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফয়জুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইমরান হোসেন আহত জুলাইযোদ্ধার তালিকাভুক্ত না। তবে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়ি গিয়েছিলাম। পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনা সর্ম্পকে অবগত হয়েছি। শুনেছি- ভয়ে তিনি তালিকাভুক্ত হননি এবং মামলা করেননি। গুলিবিদ্ধ হয়েও তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন গোপনে। সম্প্রতি ঈদে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। এরপর গত কয়েকদিন আগে গাজীপুর ফিরে গিয়ে তিনি হঠাৎ মারা যান।    

এ বিষয়ে নান্দাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুলাইযোদ্ধা হিসেবে ইমরান হোসেনের নাম তালিকায় নেই। খোঁজ নিয়ে ঘটনা সর্ম্পকে বিস্তারিত বলা যাবে।

আমান উল্লাহ আকন্দ/আরএআর