হামরা গরিব মানসি, চাকরির ওপর দিয়া সংসার চলে। টাকা-পয়সা দেয় হামরা অংকো চলি। ছোয়াডা চলে গেল বাবা, এলা মুই কি করিমগে বাপু? মুই কি করিম? মোক ডেলি ওষুধ লাগে গে বাবা, মুই ঠিকমতো হাটা চলাও করিবা পারোনাগে বাবা।

কথাগুলো সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সেনা সদস্য এরশাদ আলীর মা তহমিনা বেগমের। আহাজারি করতে করতে এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি।

এরশাদ আলী (২৫) পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের বোয়ালমারি এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীর সাভার সেনানিবাসে সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, গত ৪ জুন তিনি দশ দিনের ছুটিতে বাড়িতে আসেন। গতকাল শুক্রবার রাত নয়টায় টিকিট না পেয়ে নাবিল পরিবহনের একটি বাসের ইঞ্জিনে বসে ঢাকা যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নূরজাহানপুর এলাকায় নাবিল পরিবহনের ওই যাত্রীবাহী বাসটি সড়কের পাশে থেমে থাকা আম বোঝাই একটি মিনি ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এরপর বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা বালুবোঝাই আরেকটি ট্রাকের পেছনে গিয়ে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে এরশাদ আলীসহ পাঁচজন নিহত হয়।

তহমিনা বেগম ও আব্দুল খালেক দম্পতির চার সন্তান। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে এরশাদ আলী তৃতীয়। অন্যদিকে এরশাদ আলী ও মনি আক্তার দম্পতির পনেরো মাস বয়সী এক ছেলে সন্তান আছে। এরশাদের দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাইয়ের স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার। অপরদিকে, এরশাদুলের বাবা মা ও স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে আলাদা সংসার। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

শনিবার বিকেলে এরশাদ আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এরশাদের মা ও বোন আহাজারি করছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও শোকাহত। তার নিহত হওয়ার খবরে বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। অপেক্ষায় আছেন কখন এরশাদের মরদেহ বাড়িতে আসবে। এসময় এরশাদের ছেলে আরাফাত হোসেনকে কোলে নিয়ে আছেন শ্যালক শাহিন ইসলাম। 

তিনি বলেন, চার বছর হলো আমার বোনের সাথে তার বিয়ে হওয়ার। আজকে সকালে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই আপু গেছে। দুলাভাইয়ের চাকরির ওপর সংসারটি নির্ভর ছিল। 

এরশাদ আলীর বোন নারগিস বলেন, আমার ভাই চার তারিখে ছুটি পাইছে, দশদিনের ছুটিতে আসছে। যাওয়ার সময় টিকেট পায়নাই, পরে ইঞ্জিনে টিকেট কাটছে। তার টাকা দিয়েই সংসার চলে। ছয়-সাত বছর ধরে চাকরি করতেছে। একটা ছোট বোন আছে তাকে বিয়ে দিল। আবার একটা বড় ভাই আছে কোনো কর্ম নাই তাকে একটা অটো কিনে দিল। চাকরিটার ওপর পুরো পরিবারটা চলে। এখন এই পরিবারটার কী হবে?

এমএএস