সুনামগঞ্জের আব্দুজ জহুর সেতু। এ সেতু দিয়ে চার উপজেলার মানুষ যাতায়াত করেন। সেতু উদ্বোধনের শুরুর দিকে সড়ক প্রশস্ত থাকলেও এখন আর সেটি নেই। সেতুর ওপর গড়ে উঠেছে অস্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড। সিএনজি স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় এলাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে।

তবে সিএনজি স্ট্যান্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, জেলা পুলিশ সুপারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তারা সেতুর ওপর অস্থায়ী স্ট্যান্ড করেছেন। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বলছেন, এ দাবি একেবারেই অসত্য ও ভিত্তিহীন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর নিচের একদিকে মল্লিকপুর এলাকায় একটি সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে। এই স্ট্যান্ডটি জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও ধর্মপাশার যাত্রীরা ব্যবহার করেন। অপরদিকে নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আরেকটি সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে। এ স্ট্যান্ডটি জামালগঞ্জ ও সাচনা এলাকার যাত্রীরা ব্যবহার করেন। নির্ধারিত এ দুটি স্ট্যান্ড থাকলেও সিএনজি নিয়ে তারা সেতুর ওপরে এসে অবস্থান নেন। তাদের পাশেই অবস্থান নেন ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালকরা। এতে সেতুর ওপরের প্রশস্ত রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে।

জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুজ জহুর। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অগ্রভাগের একজন সংগঠক ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ), ১৯৭৩ সালে সাবেক সিলেট-৫ আসন, দোয়ারাবাজার-ছাতক (বর্তমান সুনামগঞ্জ-৫ আসন) থেকে ও ১৯৯১ সালে সুনামগঞ্জ-৪ (বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৭ সালের ২২ মে মৃত্যুবরণ করেন। এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের নামে নামকরণ করা হয় সুনামগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটির।

প্রায় ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাটি এলাকার বহু দিনের কাঙ্ক্ষিত সুরমা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। এরপরই হাওর জনপদ বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ কমে। 

তবে উদ্বোধনের এক বছরের মাথায় সেতুতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লেগুনা-সিএনজি চালকদের সঙ্গে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালকদের সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষের জের ধরে তাদের সংগঠনের মালিক পক্ষ সেতু ভাগ করে দেয়। সে ভাগ অনুযায়ী সারা দিন একপাশে অবস্থান করে সিএনজি ও আরেক পাশে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল। 

এ বিষয়ে সিএনজি চালক ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালকদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রয়েছে। সিএনজি চালকরা বলছেন, সেতুর নিচের স্ট্যান্ডে অবস্থান করলে যাত্রী মেলে না। যাত্রীরা সরাসরি এসে সেতুর ওপরে চলে আসে। কারণ মোটরসাইকেল চালকরা সেতুর ওপর সবসময় অবস্থান করেন। 

আর মোটরসাইকেল চালকরা বলছেন, তাদের নির্ধারিত মোটরসাইকেল রাখার জায়গা সেতুর পশ্চিম পাড়ে। শহর থেকে সেতুর পশ্চিম পাড় অনেক দূরে হওয়ায় কোনো যাত্রী পান না তারা। শহরের কাছেই দুটি সিএনজি স্ট্যান্ড হওয়ায় সব যাত্রী সিএনজি দিয়ে চলে যায়। তাই তারা সেতুর ওপরে অবস্থান করেন।

সিএনজিচালক কাশেম মিয়া বলেন, মল্লিকপুরে আমাদের সিএনজি স্ট্যান্ড। সেখানে থাকলে কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না। কারণ সব যাত্রী সরাসরি চলে আসে সেতুর ওপরে। তাই আমরা এখানে অবস্থান নিছি।

পলাশ এলাকার সিএনজিচালক নিজাম মিয়া ও আলামিনের বক্তব্য একই। তারাও বললেন নির্ধারিত জায়গায় থাকলে ট্রিপ পাওয়া যায় না। এতে আরও লোকসান হয়। তাই সেতুর ওপরে এসে অবস্থান নিয়েছেন। তবে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালকদের ব্যাপারে তারা বলেন, মোটরসাইকেল চালকরা যদি তাদের নির্ধারিত জায়গায় থাকতো তাহলে কোনো অসুবিধা হতো না। আমরা নিজেরাও নির্ধারিত জায়গায় সিএনজি নিয়ে থাকতে পারতাম।

ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান জুনায়েদ আহমদ জনি। তিনি বলেন, সিএনজি নিয়ে তারা সেতুর ওপরে থাকেন। আমরা নিচে থাকলে যাত্রী পাব না। সব যাত্রী তারাই নিয়ে যাবে। তাই আমরাও সেতুর ওপরে অবস্থান নিয়েছি।

মোটরসাইকেলচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সমিতির নেতারা সীমানা ভাগ করে দিয়েছেন। তাদের সীমানা হয়ে যাত্রী আসতে হয় আমাদের কাছে। এতে সব যাত্রী তারাই নিয়ে নেয়। আমরা একটু সামনে গেলে মোটরসাইকেলের চাবি রেখে দেয়। প্লাগ খুলে ফেলে।

সিএনজি স্ট্যান্ডের ম্যানেজার ফজর আলী বলেন, যাত্রীদের এমন অভ্যাস হয়েছে তারা সরাসরি সেতুর ওপরে চলে আসে। আর মোটরসাইকেল চালকরাও সেতুতে থাকে। এতে আমরা কোনো যাত্রী পাই না। পরে এসপি স্যারের কাছ থেকে আমরা সেতুতে সিএনজি রাখার অনুমতি এনেছি। তবে বেশি না। শুধু মাত্র সিরিয়ালের সিএনজিগুলো সেতুর ওপরে থাকে। বাকী সিএনজি সেতুর নিচে নির্ধারিত স্ট্যান্ডে থাকে।

সেতুতে সিএনজি রাখার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি একেবারেই অসত্য ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, তারা অবৈধভাবে সেতুর ওপরে সিএনজি রাখে। আমরা প্রায়ই সেতু থেকে সিএনজি ও মোটরসাইকেল সরানোর জন্য অভিযান পরিচালনা করি। আমরা চলে এলে তারা আবার সেতুর ওপর ওঠে।
 
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের সব জায়গায় এটি রয়েছে। মূলত জায়গার অভাব ও লোক বেশির জন্য এমন হচ্ছে।

এসপি