হাল ছাড়েননি ফরহাদ, অবশেষে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম
ফরহাদ হোসেন
সারা দেশের মধ্যে ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন জামালপুরের কৃষক বাবার সন্তান ফরহাদ হোসেন। তিনি জামালপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের জাফরশাহী এলাকার কৃষক তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। ফরহাদ হোসেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
৪৪তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও পার্শবর্তী এলাকার লোকজন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা ফরহাদ হোসেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আবার নিজ গ্রামের মেধাবী সন্তান ফরহাদ হোসেনকে এক নজর দেখতে তার বাড়িতে প্রতিনিয়ত ভিড় জমাচ্ছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
বিজ্ঞাপন
ফরহাদ হোসেন ও তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের ৯১নং জাফরশাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফরহাদ হোসেনের শিক্ষাজীবন শুরু। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে ওঠা মেধাবী ফরহাদ হোসেন ২০১২ সালে কৈডোলা জাফরশাহী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময় টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতেন। মাভাবিপ্রবি থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে থাকেন ফরহাদ।
৪১তম ও ৪৩তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন ফরহাদ হোসেন। তিনি ২০২৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে ফরহাদ হোসেন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় কৃষি ব্যাংকে কর্মরত। চাকরির পাশাপাশি তার লক্ষ্যে ছিলো বিসিএসে ক্যাডার হওয়া। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আবারও ৪৪তম বিসিএসে অংশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় না থাকার পেছনেও রয়েছে তার প্রস্তুতির অন্যতম লক্ষ্য। ফরহাদ হোসেন ২০২০ সাল থেকেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বন্ধ রেখেছেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
কৃষক তোফাজ্জল হোসেন ও গৃহিণী হামিদা বেগম দম্পতির ২ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে ফরহাদ হোসেন দ্বিতীয়। ফরহাদ হোসেনের বড় ভাই ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে। ছাত্রজীবন থেকেই ফরহাদ হোসেন লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষক বাবা তোফাজ্জল হোসেনকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতেন। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার মোহা. নজমুল ইসলামের মেয়ে নুসরাত-ই-জান্নাত নীতির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্দ হয়ে সংসার জীবন শুরু করেন ফরহাদ হোসেন।
জাফরশাহী গ্রামের আল হেলাল বলেন, ছোটবেলা থেকেই ফরহাদ অনেক শান্ত ও মেধাবী ছিল। তার এই সফলতার জন্য আমাদের এই গ্রামের নাম উজ্জ্বল হয়েছে। আমরা চাই এলাকার যে ছোট ছেলেমেয়ে আছে তাদের প্রতি ফরহাদ যেন নজর রাখে। ফরহাদের মতো আরও যেন এ রকম ফলাফল তারা করতে পারে।
ফরহাদের স্ত্রী নুসরাত-ই-জান্নাত নীতি বলেন, কলেজ থেকেই আমাদের পরিচয়। আমি আমার স্বামীর পাশে অতীত থেকেই ছিলাম। সব সময় সাহস যুগিয়েছি। প্রথমে সবাই সফলতা পায় না। ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসেও চেষ্টায় সফলতা না পাওয়ায় খুব চিন্তায় পড়েছিলেন। আমি সব সময় তাকে শুধু একটা কথাই বলতাম চেষ্টা চালিয়ে যাও, ভেঙে পড়ো না। আমার স্বামীর ফলাফলে আমরা খুবই খুশি, সবাই দোয়া করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর এই অর্জন আমার ও আমার পরিবারের জন্য অনেক আনন্দের। বিসিএসের যে জার্নিটা প্রথম থেকে সেটা খুব সুন্দর ছিলো না, অনেক কষ্টের ছিলো। তার অনেক কষ্টের ফলে আজকের এই সফলতা। তার সফলতার জন্য সকলেই আনন্দিত দেখে খুব ভালো লাগছে। সকলের কাছে দোয়া চাই সে যেন দেশের, সমাজের ও এই গ্রামের জন্য ভালো কিছু করতে পারে।
ফরহাদ হোসেনের বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, অনেক কষ্টে কৃষি কাজ ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। আমার ছেলে আজ বিসিএস ক্যাডার হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার খবর যখন পাইছি। তখন আমার মনে হয়েছে আমি কেবল মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়ে আসছি। এ জন্য এলাকাবাসী অনেক কৃতজ্ঞতা জানাইছে।
ফরহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মা-বাবা খুবই সাধারণ মানুষ। তারা খুব পরিশ্রম করে আমাকে মানুষ করেছেন। বাবা-মা সব সময় চেয়েছে যে আমি এমন কিছু করি যেটা তারা সবাইকে বলতে পারবে ও দেশের সেবা করতে পারবে। তাদের কথা চিন্তা করেই পড়াশোনা শেষ করে বিসিএসের জন্য প্রস্ততি নিতে থাকি। এক্ষেত্রে আমার স্ত্রীও অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমি যখন প্রশ্ন ব্যাংক দেখি তখন মনে হয়েছে, যেগুলো সিলেবাসে আছে সেগুলো আমার পরিচিত।
তিনি আরও বলেন, এর আগে বিসিএসে অংশ নিয়ে যখন না পারি তখন আরও ভালো করে প্রস্তুতি নিতে থাকি। মহান আল্লাহ কপালে লিখলে এটা হয়ে যাবে। প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হবো এটা আমার জন্য একটা আশ্চর্যের বিষয় ছিল। এক্ষেত্রে মা-বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, এলাকাবাসী, সহকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় ভাই সকলের সাহস অনুপ্রেরণা আমাকে শক্তি যুগিয়েছে। সকলের কাছে দোয়া চাই। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করে মানুষের সেবা করতে পারি ও এলাকাবসীর সেবা করতে পারি।
আরএআর