ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নগরীর জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন বন্ধ রেখেছে সিসিক/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

সম্প্রতি কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর সিলেটজুড়ে বিরাজ করছে আতংক। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে সিলেট সিটি করপোরেশনকেও (সিসিক)। ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে সিসিক। বর্তমানে ভূমিকম্প পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা চলছে। তীব্র মাত্রার ভূমিকম্পে যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরপরই খোঁজা হবে উৎপত্তিস্থল, চলবে গবেষণা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে সিলেটে ভূমিকম্প হলেও বেশিরভাগের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের শিলং ও মেঘালয় অঞ্চলে। তবে সম্প্রতি হওয়া কয়েক দফা ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ডাউকি। এর বাইরে সবশেষ গত সোমবার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দক্ষিণ সুরমার জালালপুর ইউনিয়নে। এরপর থেকেই উৎপত্তিস্থল নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় সিলেটে।

তারা বলছেন, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল না খোঁজে প্রস্তুতির ওপর জোর দেওয়া দরকার। কারণ উৎপত্তিস্থল নিয়ে অনেক গবেষণার প্রয়োজন এবং বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। সেই হিসেবে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া ভালো হবে। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নগরে বন্ধ থাকা ৬টি মার্কেটসহ ২৫টি ভবন এখনই খুলে দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি ঝুঁকি বিবেচনায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে নগরীর সব ভবন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে মাঠে নামছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বিশেষজ্ঞ দল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণার চেয়ে ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে নগরীর সব ভবনের সক্ষমতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। চিহ্নিত করা হবে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন।

এদিকে সিলেটে বন্ধ থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো বৃহস্পতিবার (১০ জুন) থেকে জরিপ শুরু করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বিশেষজ্ঞ দল। জরিপ শেষে তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বন্ধ থাকা ভবনগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিসিক।

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, শাবিপ্রবির সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (সিইই) ও পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকরা বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিকেল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোয় জরিপ শুরু করেন। তারা এ ভবনগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ঝুঁকির মাত্রা নিশ্চিত করবেন। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মার্কেট খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সিসিক। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি মার্কেট পরিদর্শন করেন। তাদের দেওয়া প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেবে সিসিক।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভেতরের সব ভবন পরীক্ষা করা হবে। সিসিকের সমন্বয়ে আমরা এ কাজটি করব। কিন্তু এটা আমাদের পক্ষে একা করা সম্ভব নয়। তাই সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরও নেওয়া হবে। সবাই মিলে কাজটি করব। এ ক্ষেত্রে সব ভবন পরীক্ষা শেষ করতে হয়ত ৬ থেকে ৮ মাস সময় লাগতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ফল্ট সেটি ডাউকি। সে হিসেবে এ ফল্ট যেকোনো সময় ৬ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করার শক্তি রাখে। তাই এখন গবেষণার চেয়ে মানুষকে বাঁচানো বা ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সেদিকে লক্ষ দেওয়া জরুরি। কিন্তু নতুন কোনো ফল্ট তৈরি হয়েছে কি না সেটিও গবেষণার প্রয়োজন। সেটি নিয়েও কাজ হবে। আপাতত ক্ষয়ক্ষতি কমানোর পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি জরুরি।

তুহিন আহমদ/এসকেডি