সুনামগঞ্জের বিখ্যাত পর্যটন স্থান ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরে পরিবেশ ধ্বংসে জড়িত হাউসবোট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (২৭ জুলাই) সুনামগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ও তাহিরপুর আমল গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলমগীর এ নির্দেশ দেন।

বিচারক মোহাম্মদ আলমগীর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮-এর ১৯০(১) ধারা অনুযায়ী আমলে নেওয়ার ক্ষমতাবলে পুলিশকে হাওরে চলাচলকারী অবৈধ হাউসবোট ও পরিবেশ বিনষ্টকারী যন্ত্রপাতি তাৎক্ষণিক জব্দের নির্দেশ দেন।

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক বাড়লেও স্থানীয়দের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। বরং মাছ, পাখি ও গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অভয়ারণ্যের বিধি উপেক্ষা করে ট্রলার ও হাউসবোট চলাচলের কারণে হাওরের প্রকৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিচারক আরও বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর এখন অভিভাবকহীন। সবার আগে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতির ওপর এই দখলদারি চলতে পারে না।

আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও ধোপাজানে শত কোটি টাকার বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নদীতে বেপরোয়া ড্রেজার, পাইপ ও ট্রাক ব্যবহার করে বালু লুট চলছে বলে আদালতের নজরে এসেছে।

এ বিষয়ে আদালত উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (১৯৯৫), বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২, মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০, বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩, এবং বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়গুলো তদন্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। আসামিদের শনাক্তে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র প্রস্তুত এবং পাইপ, ভলগেট, ড্রেজার, হাউসবোটসহ সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দে সিলেট পিবিআইকে নির্দেশ দেন বিচারক।

সুনামগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর মল্লিক মঈনুদ্দিন সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় সংবাদপত্রে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই আদালত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইসঙ্গে যাদুকাটা ও ধোপাজান নদীর বালু লুটের বিষয়টি তদন্তে পিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু বাংলাদেশেরই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্র। অথচ বছরের পর বছর ধরে অপরিকল্পিত পর্যটন, বালু উত্তোলন ও পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ড হাওরের জীববৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যকে চরম হুমকির মুখে ফেলছে।

তামিম রায়হান/এএমকে