হাতিয়ায় কোস্টগার্ডের অভিযানে ব্যবসায়ী আটক, অস্ত্র উদ্ধার
নোয়াখালীর হাতিয়ায় অভিযান চালিয়ে আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে মিজান মাঝি নামে এক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। শুক্রবার শুক্রবার (৮ আগস্ট) ভোররাত থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এ সময় আটক মিজান মাঝির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলা বাজার বিসমিল্লাহ মৎস্য আড়তে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার বিএন মো. সিয়াম-উল-হক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, হাতিয়ার বাংলাবাজার মাছঘাটে মিজান মাঝির মাছের আড়তে বিপুল অস্ত্র মজুত রয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। মিজান মাঝির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলা বাজার বিসমিল্লাহ মৎস্য আড়ত তল্লাশি করে ৯টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ১ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ, ৩টি দেশীয় অস্ত্র এবং ২৯টি হাত বোমা জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মিজান মাঝির বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি বলে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
কোস্টগার্ডের প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই শুক্রবার দুপুরে ভূঁইয়ার হাট বাজারে মিজান মাঝিকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে ভূঁইয়ার হাট বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা, ব্যবসায়ী আহসান উল্ল্যাহ, আবুল খায়ের, আব্দুল করিম, মধু, জহির প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিজ্ঞাপন
বক্তারা বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক মিজান মাঝি একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা অথবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নেই এবং থানায় কোনো মামলাও নেই। তারা অভিযোগ করেন, কোস্টগার্ডের সদস্যরা তার ঘরের দরজা ভেঙে তাকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যান। অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন তারা।
আরও পড়ুন
মিজান মাঝির স্ত্রী আফরোজা বেগম অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ২টা ৪০ মিনিটে ৩০-৩৫ জন লোক তাদের ঘরের ৩টি দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তারা নিজেদের কোস্টগার্ড পরিচয় দিয়ে আমার স্বামী মিজান মাঝির হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে। তারা ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ করে এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নেয়। পরে তারা আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে কোনো মালামাল লুট হয়নি এবং কোনো ক্ষতি করা হয়নি মর্মে মুঠোফোনে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে। পরে কোস্টগার্ড সদস্যরা আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যান।
মিজান মাঝির ছেলে শাহাদাত হোসেন রুবেল বলেন, আমার বাবা চরবাটা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে বাবার বিরুদ্ধে চরজব্বার থানায় অথবা অন্য কোথাও কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই। আমাদের এলাকায় চারবারের নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সাহেব আসবেন। তার অনুষ্ঠান সফল করতে বাবা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এর একদিন আগে বাবাকে আটক করে এমন অস্ত্রের নাটক দেখানো হলো, আমরা আসলে লজ্জিত। রাজনীতি ও ব্যবসায়িক কারণে আমার বাবার বিরুদ্ধে কিছু লোক শত্রুতা করেছে। তারাই কোস্টগার্ডকে দিয়ে বাবাকে তুলে নিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবাকে শুক্রবার রাত ৩টায় নিয়ে গেলেও দুপুর ২টা পর্যন্ত থানায় হস্তান্তর না করে অস্ত্র উদ্ধারের নামে নাটক সাজিয়ে অস্ত্র, ডাকাতিসহ বিভিন্ন খারাপ মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমাদের বাড়ি পার হয়ে মেঘনা নদী পার হয়ে বাবার একটি মাছের দোকানে বাবাকে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র পাওয়ার নাটক সাজায়। অথচ বাবা গত ছয় মাসেও সেই আড়তে যাননি।
এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ বি এম জাকারিয়া বলেন, মিজান মাঝি দলের পরীক্ষিত নেতা। রাতের অন্ধকারে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আমরা বিব্রত। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’
হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবু বক্কর ছিদ্দিক ওরফে মিজান মাঝিকে শুক্রবার বিকেলে থানায় হস্তান্তর করেছে কোস্টগার্ড। তার বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।’
হাসিব আল আমিন/এএমকে