নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দরিদ্র কৃষক সোহেল রানার (৪৩) একমাত্র গাভির মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিপক্ষ ঘাসে বিষ প্রয়োগ করে। সেই ঘাস খেয়ে গাভিটি মারা গেছে।

এ ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক। এদিকে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে গাভির ময়নাতদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের দোবিলা গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা দিনমজুরির পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে লিজ নেওয়া জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেন। তার সংসারের একমাত্র ভরসা ছিল ওই গাভিটি। গত ১৯ আগস্ট দুপুরে লিজ নেওয়া জমি থেকে ঘাস এনে গাভিকে খাওয়ানোর পর সন্ধ্যায় তার পেট ফেঁপে ওঠে এবং দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। টানা তিন দিন চিকিৎসার পর শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে গাভিটি মারা যায়।

কৃষক সোহেল রানার দাবি, লিজ নেওয়া জমিতে তার অগোচরে আজিজ মন্ডলের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বিষ প্রয়োগ করেন। সেই বিষাক্ত ঘাস খাওয়ানোর কারণেই তার গাভিটি মারা গেছে। গাভিটি চার মাসের গর্ভবতী ছিল। এর ফলে তার প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সোহেল রানা বলেন, আমি গরিব মানুষ। সংসারের আয়-রোজগারের ভরসা ছিল এই গাভিটাই। গরুটি মারা যাওয়ায় একেবারেই পথে বসে গেলাম। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী।, জানি না আমি ন্যায্য বিচার পাব কি-না।

এ বিষয়ে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী বলেন, জমিতে বিষ প্রয়োগের কারণে সোহেলের গাভি মারা গেছে। তিনি খুব দরিদ্র মানুষ। গরুটি মারা যাওয়ায় তিনি বড় ক্ষতির মুখে পড়লেন।

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সোহেল রানা বাগাতিপাড়া মডেল থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারা হলেন- দোবিলা এলাকার আজিজ মন্ডলের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা, মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মোহাইমিনুল হক মিঠু এবং কৈপুকুরিয়া এলাকার লুৎফর আলী।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত মেহেরুন্নেসা বলেন, পুলিশ এসেছিল, আপনারা পুলিশের কাছেই ঘটনা জেনে নিন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।

অভিযুক্ত লুৎফর আলী বলেন, জমির মালিক মেহেরুন্নেসা আমার বিয়ান। তিনি আমাকে বলেন জমিতে ঘাস মারা বিষ দেওয়ার জন্য কাজের লোক ঠিক করতে। আমি শুধু লোক ঠিক করেছি, পরে তারা গিয়ে বিষ দিয়েছে। আমি এর বেশি কিছু জানি না।

অপর অভিযুক্ত মোহাইমিনুল হক মিঠুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গরুর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেয়। মৃত গাভীর নমুনা সংগ্রহ করে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে পাঠানো হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু হায়দার আলী বলেন, গাভীর ময়নাতদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

বাগাতিপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আশিকুর রহমান/আরএআর