সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজদের ঘড়িঘরের বেষ্টনীর ভেতর জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিদায়ী জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদের নেতৃত্বাধীন কমিটির সিদ্ধান্তে সিটি করপোরেশন এ নির্মাণকাজ শুরু করেছে।

নাগরিক সমাজ, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্ব ও নবাব পরিবারের উত্তরসূরিরা বলছেন, দেড় শতাব্দী প্রাচীন এই প্রতীকী স্থাপনাটির সৌন্দর্য ও স্থাপত্যশৈলী আড়ালে চলে যাবে। এ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সোমবার ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’, ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’ ও ‘পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট’-এর প্রতিনিধিরা নতুন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের কাছে স্মারকলিপি দেন।

তাদের দাবি, শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণ মহৎ উদ্যোগ হলেও তা কোনো ঐতিহাসিক স্থাপনার সৌন্দর্য নষ্ট করে করা উচিত নয়। উন্মুক্ত অন্য কোনো স্থানে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঘড়িঘরটি সিলেট শহরে অবস্থিত ঊনবিংশ শতকের একটি স্থাপনা। যা মূলত একটি বিরাটাকার ঘড়ি, একটি ঘরের চূড়ায় স্থাপিত। বড়লাট লর্ড নর্থব্রুকের সফর উপলক্ষ্যে ১৮৭৪ সালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান নিজস্ব অর্থায়নে ঘড়িটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তার ছেলে নবাব আলী আমজদের নামে এটি পরিচিতি পায়। কীন ব্রিজ পার হয়ে নগরের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে থাকা এই ঘড়িঘর সিলেটের ঐতিহ্যের প্রতীক। 


নবাব আলী আমজদের দৌহিত্র ও সাবেক এমপি নবাব আলী আব্বাস খানও এ উদ্যোগের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি কেবল একটি পরিবারের নয়, সমগ্র সিলেটবাসীর অনুভূতিতে আঘাত।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও পরিবেশ সংগঠক আবদুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, সাবেক ডিসি মুরাদের নির্দেশনায় তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ শহীদদের স্মৃতিতে অন্যত্র স্মৃতিফলক নির্মাণের সুযোগ ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভেতরে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা আইনেরও লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণকর্মীরা। 

সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, জেলা প্রশাসনের সভাপতিত্বে কমিটি স্থান নির্ধারণ করায় তারা শুধু বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে। 

সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ঘটনাস্থলের নিরাপত্তা ও পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে স্থানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দল নতুন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। 

তিনি জানিয়েছেন, সরেজমিন ঘড়িঘর পরিদর্শন করে বিষয়টির সমাধান করা হবে। 

এমএসএ