মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের কুল্লিয়া গ্রামে এক ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। ভ্যান-সাইকেলের মেকানিক মো. সাত্তার মোল্লার সঙ্গে একটি বেজির বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। যা দেখে হতবাক সবাই। 

জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে গ্রামের পুকুরপাড়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকা একটি বেজি ছানা দেখতে পান সাত্তার মোল্লা। প্রাণীটির প্রতি মায়া হয়। বাড়িতে নিয়ে আসেন। স্থানীয়ভাবে পরিচর্যা করে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলেন। তখন থেকেই প্রাণীটি তার সঙ্গে রয়েছে। 

সাত্তার মোল্লা বলেন, আমার বাড়ির পুকুর পাড়ে একটা বেজি ছানা অসুস্থ অবস্থায় পেয়েছিলাম। তারপরে সেখান থেকে তুলে এনে প্রথমে খাচায় আটকে তাকে পুরোপুরি সুস্থ করেছি। ভেবেছিলাম বন্যপ্রাণী বনে থাকাই ভালো। তাই একাধিকবার ছেড়েও দিয়েছি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো বারবার সে ফিরে এসেছে আমার কাছেই। ভালোবেসে তার নাম রেখেছি লালু। লালু নামে ডাকলেই সে যেখানেই থাকে সেখান আমার কাছে ছুটে আসে। লালুর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। লালু আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না, আমিও লালুকে ছাড়তে পারি না। লালুর মায়ায় জাড়ায়ে গেছি। এখন বেজিটি পুরোপুরি বড় হয়ে গেছে। কিন্তু  মানুষের ক্ষতি করে না। বরং দিনের বেশির ভাগ সময় আমার দোকানের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। 

তিনি বলেন, প্রতিদিন বাজার থেকে মাছ, মাংস, দুধ এবং কখনো কলা এনে বেজিটিকে খাওয়ানো হয়। আমি একজন সাধারণ সাইকেল মিস্ত্রি। এই উপার্জনের অর্থ দিয়েই আমার পরিবার চলে। তারপরও বেজিটার পেছনে আমার অনেক অর্থ ও শ্রম ব্যয় হয়েছে।

সাত্তার মোল্লা বলেন, শুরুর দিকে পরিবারের লোকজন বেজি পালনে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাদের আশঙ্কা ছিল প্রাণীটি হয়ত এক সময় ক্ষতি করতে পারে। তবে এখন পরিবারও প্রাণীটির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আগে নিরুৎসাহিত করত। এখন তারাও খাওয়ায়, আদর করে বেজিটাকে।

এদিকে গ্রামের অনেক মানুষ প্রতিদিন সাত্তারের দোকানে ভিড় করেন শুধু বেজিটিকে একনজর দেখার জন্য। কেউ ছবি তোলেন, কেউ ভিডিও করেন। কারও কারও বিস্ময়– বেজি সাধারণত হিংস্র প্রাণী, কিন্তু এই বেজি আচরণে শান্ত।

স্থানীয় বাসিন্দা রহিতোষ বিশ্বাস বলেন, কুল্লিয়া বাজারে মেকানিক ছাত্তার ভাই একটি বেজি পালন করেছেন। সেই বেজির সাথে তার খুব বন্ধুত্ব। এ রকম বিষয় আমরা আগে কখনো দেখি নাই। ছাত্তার ভাইয়ের সাথে বেজির বন্ধুত্ব দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছাত্তার ভাইয়ের দোকানো ভিড় করে। 

আরেক বাসিন্দা সজিব হাসান বলেন, বেজি সাধারণত মানুষের ক্ষতি করে বা কামড় দেয়। কিন্তু এই ছাত্তারের যে লালু নামের  বেজিটা রয়েছে সে একেবারেই আলাদা। সাত্তারের সঙ্গে ওর সত্যিকারের বন্ধুত্ব হয়েছে। লালু বেজিটা আশপাশের লোকজনসহ সত্তারের পারিবারেরও কোনো ক্ষতি করেনি। মানুষের সাথে বন্যপ্রাণীর বন্ধুত্বের বিষয়টা আমরা খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করি। আমাদের কাছে খুভ ভালো লাগে।

শ্রীপুরের বাসিন্দা জাবেদ মাহমুদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেজি এবং মানুষের বন্ধুত্বের বিষয়টি জানতে পেরে এক নজর দেখার জন্য ছুটে এসেছেন কুল্লিয়া বাজারের ছাত্তারের দোকানে। তিনি বলেন, মানুষ আর প্রাণীর এই সম্পর্ক সত্যিই অদ্ভুত। বিষয়টা আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি খুব আনন্দ উপভোগ করেছি। তাদের ভালোবাসা অটুট থাকুক। 

এখন শুধু কুল্লিয়া গ্রামে নয়, আশপাশের গ্রামগুলোতেও সাত্তার আর তার বেজি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ প্রাণীটিকে দেখতে ভিড় করছেন দোকানে।

তাছিন জামান/আরএআর