হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের চালানো তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয় ও পৌর মিলনায়তন ভবন ও মালামাল ‘কম দামে’ বিক্রি করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তাণ্ডবের পর ভবন দুটির ক্ষতি ধরা হয় ১১ কোটি টাকা। অথচ নিলাম দরপত্রের মাধ্যমে ভবন দুটি বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ২৩ লাখ টাকায়। এ দর পৌরসভার নির্ধারিত প্রাক্কলন মূল্যের চেয়ে সামান্য বেশি।

যদিও ভবন দুটি কেনার জন্য শতকরা ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আয়কর জমা দিতে হবে। সেই অনুসারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওই দুই ভবন কেনার জন্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা গুনতে হবে।

সর্বোচ্চ প্রায় ২৩ লাখ টাকা দরদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামীম এন্টারপ্রাইজের কাছে ভবন দুটি বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। আর শামীম এন্টারপ্রাইজের পক্ষে ভবন দুটি বিক্রির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ভবন দুটির দাম উঠেছে ৪২ লাখ টাকা। তবে এর পেছনে যারা রয়েছেন, তারা ৪৫ লাখ টাকায় ভবন দুটি বিক্রি করতে চাইছেন। এর মানে পৌর কর্তৃপক্ষ ২২ লাখ টাকা কমে ভবন দুটি বিক্রি করছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিলাম দরপত্র ক্রয় করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করেছেন কোন প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে ভবন দুটি নেবেন। এর বিনিময়ে দরপত্র কেনা অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে। এ কাজে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন ‘মধ্যস্ততা’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় দরপত্র কেনা অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্র জমা দেয়নি। তবে নিয়ম অনুসারে দরপত্র আহ্বান যেন বাতিল না হয়, সে কারণে ‘সমঝোতা’ করে তিনটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। রুবেল ও শোভনের ‘মধ্যস্ততায়’ ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা মিলে শামীম এন্টারপ্রাইজের নামে ভবন দুটি কিনছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয় ও পৌর মিলনায়তন ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত পৌরসভা ও পৌর মিলনায়তন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভবন দুটি ভেঙে নিলামে বিক্রির জন্য গত ২৮ মার্চ দরপত্র আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ।

মোট ২৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করে। চার হাজার টাকায় (অফেরতযোগ্য) বিক্রি হয় একেকটি দরপত্র। গত ১৫ জুন ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওই দিন নির্ধারিত সময়ের পর দরপত্র বাক্স খুলে মাত্র তিনটি দরপত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে শামীম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন দুটি কেনার জন্য সর্বোচ্চ প্রায় ২৩ লাখ টাকা দর দিয়ে দরপত্র জমা দেন। এ দর পৌরসভার নির্ধারিত প্রাক্কলন মূল্যের সামান্য বেশি, যা গোপন থাকার কথা। তবে প্রাক্কলন মূল্য আগেই ‘ফাঁস’ হয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

দরপত্র দাখিল করা বাবু বিল্ডার্স মাত্র পাঁচ লাখ টাকা দর দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হন। এর বাইরে দরপত্র জমা দেওয়া এম এম বিল্ডার্স কোনো পে অর্ডার জমা দেননি।

তবে ‘মধ্যস্ততার’ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন বলেন, ‘আমি এবং আমার সভাপতি- আমরা দুইজন এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। এ কাজে আমরা যাইনি। আমরা দরপত্র কিনিনি। সমঝোতা বা কাউকে সহযোগিতা করার ব্যাপারেও আমরা ছিলাম না’।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নিকাশ চন্দ্র মিত্র বলেন, ‘ভবন দুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সেজন্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব ভেঙে ফেলার জন্য। মন্ত্রণালয়ের সকল নির্দেশনা মেনে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। স্ট্রাকচার বড় দেখা যাচ্ছে, কিন্তু ভাঙলে পাওয়া যায় শুধু দরজা-জানালা। ঢালাইয়ের তো কোনো মূল্য নেই। আমরা প্রাক্কলন মূল্য থেকে অনেক বেশি পেয়েছি। তবে দুই-তিন দিনের মধ্যে মূল্যায়ন কমিটির সভা করে সর্বসম্মক্রিমে ভবন দুটি বিক্রির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।

এসপি