একাঙ্গী চাষে খরচের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ
একাঙ্গী বা ভুঁই চম্পা মসলা জাতীয় একটি ফসল। দেখতে কিছুটা আদার মত হলেও এটি দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ, সুগন্ধী ও মাছের খাবার। পাশাপাশি এটি রান্নার কাজে ব্যবহৃত মসলা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। একাঙ্গী চাষে খরচের তুলনায় লাভ দ্বিগুণের বেশি। তাই বন্ধুর পরামর্শে একাঙ্গী চাষ করছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা ইশতিয়াক হোসেন।
তিনি ইসলামী ব্যাংক গাংনী শাখার সিনিয়র অফিসার। পেশায় ব্যাংকার হলেও কৃষির প্রতি আগ্রহ থেকে দেড় বিঘা জমিতে একাঙ্গী চাষ শুরু করেছেন। স্বপ্ন দেখছেন বিঘাপ্রতি ৫ লাখ টাকা আয়ের।
বিজ্ঞাপন
ব্যাংক কর্মকর্তা ইশতিয়াক হোসেন জানান, বন্ধুর কাছ থেকে ফসলটির সম্ভাবনার কথা শুনে মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে গাংনী উপজেলার দেবিপুর মাঠে দেড় বিঘা জমিতে একাঙ্গী চাষ শুরু করি। একাঙ্গী যেমন রান্নার মসলা ও সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, তেমনি মাছের খাবার তৈরি করা হয়।
তিনি আরও জানান, এই ফসল চাষে তেমন বেশি সার ও বিষের প্রয়োজন হয় না। গরু ছাগলেও এই ফসল নষ্ট করে না। রোগ বালাই কম থাকায় লাভের সম্ভাবনাও বেশি। এই ফসলের শুধু মাত্র পচা বা ধসা রোগ রয়েছে, যা নিয়মিত পরিচর্যা করলে রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। জেলায় বাজার চাহিদা না থাকায় উৎপাদিত একাঙ্গী পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার সরোজগঞ্জ বাজারে ৫০০০ থেকে ৮০০০ টাকা মনপ্রতি বিক্রি হয়। যদি ফলন ভালো হয় তাহলে দেড় বিঘা জমিতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
ইশতিয়াক হোসেনের ছোট ভাই রাফিজুল ইসলাম জানান, বড় ভাই ব্যাংকের চাকরি করেন। তিনি সব সময় থাকতে পারেন না। তাই আমি জমিতে সার, বিষ দেওয়াসহ আগাছা পরিষ্কার করি।
এদিকে ইশতিয়াকের নতুন এই ফসল চাষের উদ্যোগ দেখে স্থানীয় চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন। ভালো ফলন পেলে তারাও পরের মৌসুমে একাঙ্গী চাষ করতে চান।
কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, একাঙ্গী নতুন একটি ফসল। দেবিপুর মাঠে এর আগে কেউ চাষ করে নাই। ইশতিয়াক ভাই দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে দাম বেশ ভালো। ইশতিয়াকের এই চাষে ফলন ভালো হলে পরের মৌসুমে আমিও একাঙ্গী চাষ করতে চাই।
আরেক কৃষক আছের আলী জানান, এই ফসল চাষে তেমন খরচ হয় না। বীজের দাম একটু বেশি হলেও সার ও বিষ কম দেওয়া লাগে। তেমন রোগ বালই না থাকায় এই ফসলে লাভের সম্ভাবনা বেশি। ইশতিয়াকের এই ফসল দেখে এখন অনেকেই একাঙ্গী চাষ করতে চাচ্ছেন। আমিও সঠিক পরামর্শ পেলে একাঙ্গী চাষ করব।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন বলেন, একাঙ্গী মসলা জাতীয় লাভজনক একটি ফসল। এটি মসলার পাশাপাশি মাছের খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এই ফসল খরচের তুলনায় লাভ বেশি। কৃষকদের উৎসাহ দিতে আমরা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিচ্ছি।
শুধু ইশতিয়াক হোসেনই নয়, চলতি বছর মেহেরপুর জেলায় বিভিন্ন মাঠে ১০ হেক্টর জমিতে একাঙ্গী চাষ হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনা ও দাম ভালো পেলে আগামীতে জেলায় একাঙ্গীর চাষ বাড়বে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
তরিকুল ইসলাম/আরএআর