সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাজ অসমাপ্ত রেখেই উদ্যোক্তাদের কাছে প্লট হস্তান্তর করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। প্লটের মাটি ভরাট না হওয়া, ড্রেনেজ ও পানির সমস্যা, অসম্পূর্ণ রাস্তা থাকাসহ নানা কারণে বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা।
সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলীতে ৭১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় গড়ে তুলেছে এই বিশাল শিল্পপার্ক। মোট ৮২৯টি প্লটে প্রায় ৫৭০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এখানে। এর মধ্যে ৫৫০টি প্লট পেয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। আর দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৭৯টি প্লট।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ অপেক্ষার পর উদ্যোক্তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত প্লট হাতে পেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে সেই প্লটগুলো এখনো স্থাপনা নির্মাণের অনুপযোগী। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও, এমনকি কয়েক দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পূর্ণ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড কাজ শেষ না করেই বিসিক শিল্পপার্ক হস্তান্তর করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়কে। নিম্নমানের রাস্তা নির্মাণ, পানির সংকট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অকার্যকারিতা এবং অসমাপ্ত মাটি ভরাট- সব মিলিয়ে পুরো শিল্পপার্ক এখন একের পর এক সমস্যার পাহাড়ে জর্জরিত।
মাটি ভরাট অসম্পূর্ণ থাকায় অনেক প্লট এখন একেকটি পুকুরে পরিণত হয়েছে। ফলে প্লট পেলেও কাজ শুরু করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। এছাড়াও পানি, গ্যাস ও নোংরা ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে ন্যূনতম শিল্প পরিবেশ তৈরি হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে উদ্যোক্তাদের।
বিজ্ঞাপন
সরকার আর্ট প্রেসের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের প্লটের বদলে পুকুর দিয়েছেন। তারা হয়তো পুকুরের জায়গায় ভুলে প্লট লিখে ফেলেছিলেন। এখানে মাছ চাষ করা সম্ভব, তবে ফ্যাক্টরি করা সম্ভব নয়।
গোল্ডেন প্রিমিয়াম ওয়েল মিলসের সত্ত্বাধিকারী মো. শরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে প্লট আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, রাস্তার লেভেলের সাথে সেই প্লটের সমতা নেই। প্রায় ৫ থেকে ৬ ফিটের গর্ত। এই অবস্থায় কাজ শুরু করা কঠিন। এটি অবকাঠামোগতভাবে উপযোগী নয়। বি ব্লকে আমরা সিরাজগঞ্জের উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি। এখানেই প্রায় ৫ লাখ সেফটি বালু কম রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের থেকে জানতে পেরেছি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, এই শিল্পপার্ক হতে পারে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় এলাকা। নৌ, রেল ও সড়কপথের সুবিধা থাকায় বিসিক শিল্পপার্কের উদ্যোক্তারা বাড়তি সুবিধা পাবেন। কিন্তু যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে শিল্প মন্ত্রণালয়কে।
সিরাজগঞ্জ বিসিক জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার নির্দেশনায় ঠিকাদারকেও বলা হয়েছে। যেখানে যেখানে মাটি কম দেওয়া হয়েছে, সেসব জায়গার মাটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পন্ন না হলে এখানে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে এবং সরকারের লক্ষ্য পূরণ ব্যাহত হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিসিক শিল্পপার্কটি পুরোপুরি চালু হলে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অসমাপ্ত কাজের কারণে সেই সম্ভাবনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত ৩০ জুলাই বহুল প্রতীক্ষিত বিসিক শিল্পপার্কের প্লট বরাদ্দ হলেও এসব অনিয়মের কারণে আজও কাজ শুরু করতে পারেনি উদ্যোক্তারা।
নাজমুল হাসান/আরএআর