বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি কাটারমাস্টার নামেই পরিচিত। এই কাটারমাস্টার কাকে বেশি ভালোবাসেন, জানালেন তার বাবা আলহাজ আবুল কাশেম গাজী।

আবুল কাশেম গাজী সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার চার ছেলে। মাহফুজুর রহমান মিঠু, জাকির হোসেন, মোখলেছুর রহমান পল্টু এবং মোস্তাফিজুর রহমান। দুই মেয়ে তাছলিমা খাতুন ও রোজিনা খাতুন নিশাত।

বড় ছেলে মাহফুজুর রহমান মিঠু গ্রামীণফোনে অফিসার পদে চাকরি করেন, মেজ ছেলে জাকির হোসেন ঘের ব্যবসায়ী, সেজ ছেলে মোখলেছুর রহমান পল্টু ব্যবসায়ী এবং ছোট ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান জাতীয় দলের ক্রিকেটার। বড় মেয়ে তাছলিমা বেগম বিবাহিত ও ছোট মেয়ে রোজিনা খাতুন নিশাত ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে নতুন জীবনে প্রবেশ করেছে। তবে নামডাক খ্যাতিতে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাবা দিবসে নিজের পরিবার ও ছেলেদের নিয়ে জানিয়েছেন নিজের কথা।

ঢাকা পোস্ট : কেমন আছেন আপনি? আজ বাবা দিবস আপনি জানেন?

আবুল কাশেম গাজী : আলহামদুলিল্লাহ্, ভালো আছি। আজ বাবা দিবস জানি না, খোঁজ নিইনি।

ঢাকা পোস্ট : ছেলে-মেয়ে কতজন আর কাকে বেশি পছন্দ করেন?
 
আবুল কাশেম গাজী : চার ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে গ্রামীণফোনের অফিসার, বউমা ডাক্তার। হাতের সব আঙুলই সমান আমার কাছে।

ঢাকা পোস্ট : জীবনের বেশির ভাগ সময় আপনার কীভাবে কেটেছে? এখন কীভাবে কাটছে?

আবুল কাশেম গাজী : আমি কৃষিকাজ করতাম। তারপর মাছের ঘের করে সংসার চালিয়েছি, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। ছোট মেয়েটাও ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছে। সম্প্রতি ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। জীবনটা পরিশ্রম করেই কেটেছে। তবে এখন আর কোনো কাজ নেই, শুধু মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাই আর বাড়ি আসি। এই হলো কাজ। বাকি সময় টেলিভিশনে খেলা দেখে সময় কাটে।

ঢাকা পোস্ট : মোস্তাফিজ নামকরা ক্রিকেটার হবেন, কখনো ভেবেছিলেন?

আবুল কাশেম গাজী : আমরা কেউ চাইনি ও ক্রিকেট খেলুক। চাইতাম লেখাপড়ায় মনোযোগী হোক। তবে সেটি কখনো করল না। শুধু খেলাধুলা নিয়েই পড়ে থাকত। সেজ ছেলে পল্টু সাতক্ষীরায় গণমুখী ক্লাবে খেলা করত। সেখানকার কোচ আলতাফের সঙ্গে মোস্তাফিজের কথা আলোচনা করে পল্টু। বলেছিল, আমার একটা ভাই আছে লেফট হ্যান্ড বল করে। তখন আলতাফ মোস্তাফিজকে নিয়ে যেতে বলে। 

এরপর মোস্তাফিজের পারফরমেন্স দেখে কোচ আলতাফ পল্টুকে জানিয়েছিল, মোস্তাফিজের কাছে আমাদের কিছু পাওয়ার আছে যদি তুই কষ্ট করিস। এরপর পল্টুর সঙ্গে মোস্তাফিজ গণমুখী ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু করে। সেই বছর অনূর্ধ্ব-১৬ দলে ডাক পায় মোস্তাফিজ। 

ওই ম্যাচে মোস্তাফিজ ১৬টি উইকেট পেয়েছিল এবং সাতক্ষীরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। আজকের মোস্তাফিজ হওয়ার পেছনে সব থেকে বেশি অবদান আমার সেজ ছেলে মোখলেছুর রহমান পল্টুর। মোস্তাফিজ যা করে দেখিয়েছে, তা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি।

ঢাকা পোস্ট : এখন কেমন লাগে?

আবুল কাশেম গাজী : খুব ভালো লাগে। সীমাহীন আনন্দ পাই। মোস্তাফিজ এখন নামডাকে বাড়ির সবাইকে ছাপিয়ে গেছে।

ঢাকা পোস্ট : মোস্তাফিজ আপনাকে না মাকে বেশি ভালোবাসেন?

আবুল কাশেম গাজী : মা মাহমুদা খাতুনকে একটু বেশি ভালোবাসে। খেলার মাঠে নামার আগে মাকে ফোন করে। মায়ের সঙ্গে কথা না বলে মাঠে নামে না মোস্তাফিজ। আমার সঙ্গে কম কথা হয়, মায়ের সঙ্গে বেশি হয়। এটা ভালো দিক। এ জন্য আমার আরও গর্ব হয়। প্রত্যেক ছেলেমেয়েই এভাবে তার মাকে ও পরিবারকে ভালোবাসুক।

ঢাকা পোস্ট : সন্তানদের কাছে কিছু চাওয়ার আছে বা তাদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?

আবুল কাশেম গাজী : না, ছেলেদের কাছে কিছু চাওয়ার নেই। তারা যা দেয় তাই এখন নিয়ে পারি না। ছেলেরা খুব বড় মনের মানুষ। তাদের কাছে আমার কিছু চাওয়া লাগে না। চাওয়ার আগেই সব দিয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশে বলার কিছু নেই। আমার সুখী সংসার। এভাবেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেতে পারলেই হয়। 

এসপি/এনএ