চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল সংকটে ভুগছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে টেকনিশিয়ান না থাকায় বন্ধ রয়েছে এক্স-রে সেবা। এ ছাড়া, অস্ত্রোপচারের জন্য অ্যানেসথেশিয়া না থাকায় সেটাও চালানো হচ্ছে ধার করে।

২৫ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে বর্তমানে ৯ জন চিকিৎসক দিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট থাকায় জরুরি সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালটি ২০১৭ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এরপর সেখানে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী, শিশু (২), নাক-কান-গলা, চক্ষু, অর্থপেডিক্স, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি ও অ্যানেসথেশিয়াসহ ১১টি জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ১১টি পদের মধ্যে এখন একজন শিশু ও গাইনী চিকিৎসক রয়েছেন। বাকী ৯টি পদে ২০১৭ সাল থেকে এখন অবধি কোনো চিকিৎসক পদায়নই হয়নি।

অন্যদিকে, ১৪টি মেডিকেল অফিসারের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩টি পদ। আর ১১টি পূরণ পদের মধ্যে আবার দীর্ঘদিন ধরে প্রেষণে রয়েছেন তিনজন চিকিৎসক। মোট ২৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে এখন রয়েছেন ৯ জন। এই ৯ জন চিকিৎসক দিয়েই চলছে হাসপাতালের সব ধরনের সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগের টেকনোলজিস্ট পদটিও শূন্য রয়েছে প্রায় ৫ বছর ধরে। ফলে এক্স-রে মেশিন থাকার পরও সেবা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালটিতে অস্ত্রোপচার থিয়েটার এবং গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার পরও অ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসক না থাকায় অপারেশন সেবা বিলম্ব হচ্ছে। ধার করা একজন অ্যানেসথেশিয়া দিয়ে সপ্তাহে এক দিন অস্ত্রোপচার করা হয়। জরুরি প্রসূতি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাজবাড়ী জেলা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে বিশেষ উদ্যোগে সপ্তাহে এক দিন অ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসক এনে অস্ত্রোপচার করান। এক্স-রে টেকনোলজিস্ট না থাকায় হাসপাতালটিতে এক্স-রে মেশিন থাকলেও তা কাজে আসছে না। ফলে এ সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ।

হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে জরুরি বিভাগ থেকে ১২০ থেকে ১৫০ জন এবং বহির্বিভাগ থেকে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও এখানে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন ৫৫ থেকে ৬০ জন রোগী। এতো রোগীকে প্রতিদিন সেবা প্রদান করতে চরম হিমসিম খেতে হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফারুক হোসেন বলেন, দুই বছর ধরে এক্স-রে সেবা বন্ধ রয়েছে এই হাসপাতালে। এক্স-রের সিআর মেশিন নেই এবং টেকনিশিয়ান পদে লোকবল না থাকায় এক্স-রে সেবা বন্ধ রয়েছে। অপারেশনের জন্য অ্যানেসথেশিয়া ডাক্তার না থাকায় প্রতি সপ্তাহে গোয়ালন্দ থেকে একজন ডাক্তার আসেন। তখন অস্ত্রোপচার করা হয়। এ ছাড়া, হাসপাতালের ২৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৯ জন চিকিৎসক দিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনজন চিকিৎসক ঢাকায় সংযুক্তিতে রয়েছেন, তারা এখান থেকে বেতন নিলেও কাজ করছেন ঢাকায়।

তিনি বলেন, শুধু চিকিৎসক সংকটই নয় এখানে নানা ধরনের সংকট রয়েছে। চিকিৎসক, সেবিকা ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক সুবিধা না থাকায় কেউ এখানে থাকতে চান না। হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য ৭০ জনের মতো জনবলকে আবাসিক থাকার প্রয়োজন। সেখানে মাত্র ১৪ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় ১৫ বছর আগেই ৩টি দ্বিতল এবং ২টি একতলা মোট ৫টি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভবনগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেই। সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন। কিন্তু সংকট নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন শতশত রোগীর সেবা দিতে চরম হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার কারণে এখনো টিকে আছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. এস এম মাসুদ বলেন, এক্স-রে মেশিনের একটা অংশ না থাকায় এবং টেকনিশিয়ান না থাকায় তা বন্ধ রয়েছে। দ্রুত একজন এক্স-রে টেকনিশিয়ান পদায়ন করা হবে। গোয়ালন্দ থেকে একজন অ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসক সপ্তাহে এক দিন বালিয়াকান্দি যান।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এই সংকট দূর হবে।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএমকে