সুনামগঞ্জের পাঁচ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বসছে বিএনপি
নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে সুনামগঞ্জে। দলের ভেতরেও বইছে সেই উত্তাপ। কে পাবেন মনোনয়ন, কার ভাগ্যে জুটবে 'গুলশানের ডাক' এই হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত এখন সুনামগঞ্জ বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে রাজধানীমুখী হয়েছেন অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী, আর বাকিরা রয়েছেন অপেক্ষায়।
আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল তিনটায় রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বসবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকেলের মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছে গেছেন ডাক পাওয়া নেতারা।
বিজ্ঞাপন
যাদের ডাকা হয়নি, তাদের মধ্যে হতাশার সুর শোনা গেলেও দলীয় দায়িত্বশীলরা জানাচ্ছেন,এটাই শেষ নয়, আরও ডাক আসবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে একাধিক দফায় কথা হবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রয়াত নজির হোসেনের স্ত্রী সালমা নজির, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনিসুল হক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলকে ডাকা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে এ আসনের বৈঠকে ডাকা হয়নি যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতালেব খান ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নিজাম উদ্দিনকে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন দলের মহাসচিবের রোববারের ডাকা গুলশান কার্যালয়ের বৈঠকে তাকে থাকার জন্য ফোন দিয়ে জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেলকে ডাকা হয়েছে বৈঠকে। এ আসনের অপর নেতা সাবেক এমপি বিচারপতি মিফতাহ্ উদ্দিন চৌধুরী রুমিকে বৈঠকে ডাকা হয়নি। নাছির উদ্দিন চৌধুরী চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ব্যাংককে থাকায় তিনি বৈঠকে থাকবেন না বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। শুক্রবার দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে নাছির উদ্দিন চৌধুরী কথা বলেছেন বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, এই আসনে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে নাছির উদ্দিন চৌধুরী-ই দলের প্রার্থী হবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। এজন্য সাবেক বিচারপতি ও এমপি রুমিকে ডাকা হচ্ছে না। তবে দল ক্ষমতায় গেলে বিচাপতি রুমিকে অন্য উচ্চতায় মূল্যায়ন করা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন ওই নেতা।
সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনে শুক্রবার পর্যন্ত কাউকে ডাকা হয়নি বলে শোনা গেছে। ওই আসন নিয়ে জেলা বা বিভাগের নেতাদের কাছে কোন বার্তাও দেওয়া ছিল না। কেউ কেউ বলেছেন, জোট হলে এই আসন জোটকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে, এজন্য ওখানে হয়তোবা কাউকে ডাকা হয় নি। তবে শনিবার বিকালে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের নেতা জিকে গৌছ জানান, ওই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছয় এম আহমেদ সভায় উপস্থিত থাকবেন।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক পৌর ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. নুরুল ইসলাম নুরুল ও জেলা বারের সভাপতি জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত সদস্য অ্যাড. আব্দুল হককে ডাকা হয়েছে।
এখানে ডাকা হয় নি জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক সভাপতি বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল মুনসুর শওকত ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, প্রয়াত দলীয় নেতা সাবেক হুইপ ফজলুল হক আছপিয়ার ছেলে ব্যারিস্টার আবিদুর রহমানকে।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক- দোয়ারা) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের দুই নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ডাকা হয়েছে। এই আসনে আর কেউ দলের মনোনয়ন চাননি।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক নাদীর আহমদ বলেন, “আমার জানামতে জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ আসনে এই পর্বে কাউকে ডাকা হচ্ছে না। এখন অন্য কেউ গেলে, আমিও ঢাকা যাচ্ছি, আমিও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করব।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত সদস্য অ্যাড. আব্দুল হক বলেন, সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের ২১ মনোনয়ন প্রত্যাশীর নামের তালিকা দুইজনের স্বাক্ষরে (আহ্বায়কসহ) দলের সিলেট বিভাগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে জমা দিয়েছি। সভায় কারা ডাক পাবেন কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা জানেন।
সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বললেন, দলীয় দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা পেয়ে তারা সংশ্লিষ্টদের রোববার বিকাল তিনটার মধ্যে থাকার জন্য বলেছেন, এরমধ্যে সুনামগঞ্জ-১ থেকে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে ১১ জনকে দলের নির্দেশনা মোতাবেক ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি।
একই তথ্য জানিয়ে বিএনপির সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জিকে গৌছ বলেন, বিএনপি বড় দল। দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে সকলকে। এটাই শেষ বৈঠক নয়। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার আগে আরও বৈঠক হবে। পরে হয়তো আরও অনেকেই ডাক পাবেন।
তামিম রায়হান/এমটিআই