পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পান্না মৃধা। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি ও তার স্ত্রী আকলিমা বেগম সপরিবারে ভারতে বসবাস করছেন। অথচ দেশে তার নামে দুস্থ নারী কল্যাণমূলক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির (ভিডব্লিউবি) আওতায় ভালনারেবল গ্রুপ ডেভলপমেন্ট বা ভিজিডি কার্ড চালু রয়েছে। তবে এই কার্ডের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত চাল আকলিমা বেগম বা তার পরিবারের কেউ পাচ্ছেন না।

‎স্থানীয়দের অভিযোগ, আকলিমা বেগম দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। তবুও তার নামে সরকারি সহায়তার কার্ড করে চাল আত্মসাৎ করছেন বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল।

‎গ্রামবাসীর দাবি, শুধু আকলিমা বেগম নয় এরকম অনেকের নামে কার্ড হয়েছে কিন্তু তারা চাল পাচ্ছেন না। ভিজিডি কার্ডের তালিকা প্রণয়নের সময় প্রকৃত দুস্থ নারীদের নাম দেওয়া হলেও কার্ড দেওয়া হয়েছে ভিন্ন কাউকে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

আকলিমা বেগমের বাড়িতে গেলে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ভারতের ব্যাঙ্গালুরে বসবাস করছেন। সেখানে তাদের একটি দোকান আছে তা দিয়ে তাদের সংসার চলে।

‎এ বিষয়ে জানতে ফোন কলে আকলিমা বেগম বলেন, আমি কার্ড পাওয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমরা দশ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে আছি। আমার কার্ড কারা, কিভাবে করেছে জানি না। তবে কার্ডটি আমার না হয়ে আমার ওখানকার পরিবারের লোকদের নামে হলে ভালো হতো। তারা অন্তত এসব সুবিধা পেত।

‎খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভিডব্লিউবি মহিলা বাছাই কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে এ কর্মসূচির জন্য উপকারভোগী মহিলা নির্বাচন করে তাদের জন্য ২২৬টি কার্ড অনুমোদন দেয়। যেখানে তালিকার চূড়ান্ত ছকে আকলিমা বেগমসহ উপজেলার ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের আশ্রাব আলী ফরাজীর মেয়ে মিতু আক্তার, পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের মো. ইলিয়াস হাওলাদারের স্ত্রী রাশিদা বেগমের নাম পাওয়া যায় যারা ভিজিডি কার্ড কিংবা চাল কোনোটাই পাননি।

‎এ বিষয়ে ঢেবসাবুনিয়া গ্রামের মিতু আক্তারের বাবা আশ্রাব আলী ফরাজী বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার এক পায়ে সমস্যা আছে। এই বয়সে ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হয়। গরিব মানুষ তাই কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে খাই। আমার মেয়ের নামে একটি কার্ড হয়েছিল, কার্ডটি আমাকে দেয়নি। আমাদের চেয়াম্যান বলেছে, কার্ড তোমাকে দিতে পারি যদি অর্ধেক অন্য একজনকে ভাগ দিতে পারো। আমি যদি কার্ডটি পাই তাহলে আমার খুব উপকার হয়।

‎পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের মো. ইলিয়াস হাওলাদারের স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, আমার একটি কার্ড হয়েছিল কিন্তু সেই কার্ডটি আমাকে দিয়ে আবার জোর করে নিয়ে গেছে। আমি খুব অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছি।

বালিপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. নাসির উদ্দীন সেন্টু বলেন, আমি ভিজিডির কোনো কার্ড আটকে রাখিনি, এটা সম্পূর্ণ চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রণে হয়।

‎৩নং বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) কবিরুল ইসলাম বলেন, ভিজিডি কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা মহিলা নির্বাচন করে আমাকে দিয়েছে। উপকারভোগী মহিলা নির্বাচনে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না।

তবে ‎বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, উপকারভোগী মহিলা নির্বাচন করে যাচাই-বাছাই আমরা করিনি। যাচাই-বাছাই সব সচিব করেছেন।

‎সার্বিক বিষয়ে ইন্দুরকানি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান বিন মুহাম্মাদ আলী বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

‎শাফিউল মিল্লাত/আরকে