কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় আর ৮৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪২২ জন এবং মারা গেছেন ১৫৪ জন।এ সময় সুস্থ হয়েছেন আরও ৫ হাজার ২০ জন। রোববার (২০ জুন) রাতে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসক অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ৮৩ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ৩৮ জন, দৌলতপুরের পাঁচজন, কুমারখালীর আটজন, ভেড়ামারার আটজন, মিরপুরের ১৪  জন এবং খোকসার ১০ জন রয়েছেন। মৃত সাতজনের তিনজন ভেড়ামারার এবং বাকিরা দৌলতপুর, কুমারখালী, খোকসা ও সদর উপজেলার বাসিন্দা।

এ পর্যন্ত জেলায় ৫৬ হাজার ৮৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার ১১০ জনের। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট অপেক্ষমাণ রয়েছেন ৭৫৯ জনের।

বর্তমানে কুষ্টিয়ায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৪৮ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯১ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ১৫৭ জন।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে কুষ্টিয়া জেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার (২০ জুন) রাত ১২টা থেকে ২৭ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। রোববার (২০ জুন) রাতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।

বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত করোনা প্রতিরোধ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কুষ্টিয়া জেলায় সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। শুধু ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া সবধরনের দোকান, শপিংমল বন্ধ থাকবে।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সবধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, শপিংমল, দোকান, রেস্টুরেন্ট ও চায়ের দোকান বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সবধরনের পরিবহন বন্ধ থাকবে।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। সম্প্রতি কুষ্টিয়া পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এখানে কঠোর লকডাউন চলছে। এরপরও কেন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হবে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, করোনার শুরু থেকেই কুষ্টিয়া জেলায় শনাক্তের হার কখনো ২০ শতাংশের ওপরে যায়নি। কিন্তু এখন শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে।

এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভিড় লেগেই আছে। বেডের তুলনায় সেখানে প্রায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড না থাকায় রোগীদের বারান্দায় রাখতে হচ্ছে। রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডের বারান্দা, স্বাস্থ্যকর্মীদের বসার জায়গাটুকুও রোগীর শয্যায় রূপান্তরিত হয়েছে। এমন অবস্থায় জেনারেল হাসপাতালের ১০ নং সার্জিক্যাল ওয়ার্ড ও মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালের একটি অংশকে করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ১০০ শয্যার বিপরীতে এখন রোগীর সংখ্যা ১২০ জন। ওয়ার্ডে নতুন করে আর কোনো রোগী ভর্তির সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে ৩০ জন সাধারণ রোগীকে পাশের মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রোগী বাড়ছে। পরিস্থিতি ভালো না। উপজেলা পর্যায়, এমনকি গ্রাম থেকে রোগী বেশি আসছেন। ২৫০ শয্যা হাসপাতালকে খুবই দ্রুত কোভিড ডেডিকেটেড করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আর অক্সিজেন যা আছে এবং যে হারে রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাতে সংকটে পড়তে হতে পারে। কারণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে যেসব রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আনা হচ্ছে, সেসব রোগীর প্রায় সবারই অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।

রাজু আহমেদ/এসপি