কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড। শনিবার (১৯ জুন) রাতে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসক অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১৬৪ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ১০০ জন, দৌলতপুরের ১৬ জন, কুমারখালীর ২৪ জন, ভেড়ামারার ১৩ জন, মিরপুরের সাত জন ও খোকসার চার জন রয়েছেন। মৃত সাত জনের চার জন সদরের ও অপর তিন জন দৌলতপুর, কুমারখালী ও মিরপুর উপজেলার বাসিন্দা।

এ পর্যন্ত জেলায় ৫৬ হাজার ৩৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৫৫ হাজার ৮৮৪ জনের। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন ৫০৫ জন।

বর্তমানে কুষ্টিয়ায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা এক হাজার ২০৭ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯১ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ১৯৫ জন।

করোনার বিস্তার রোধে ১৮ জুন রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া পৌরসভা এলাকায় চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।  সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তাছাড়া মিরপুর উপজেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পৌরসভা এলাকায়। 

বিধিনিষেধের গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, কুষ্টিয়া ও মিরপুর পৌর এলাকায় কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। এছাড়া সব ধরনের দোকান বন্ধ থাকবে। শহরে কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।

সরেজমিনে শহরের এনএস রোডের কিছু দোকানপাট বন্ধ ছাড়া আর কোথাও বিধিনিষেধ মানতে দেখা যায়নি। মানুষ চলাচল করায় যানবাহনের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। মিরপুর পৌরসভা এলাকারও একই চিত্র।

জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড। সম্প্রতি কুষ্টিয়া পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এখানে আট দিন ধরে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। এরপরও কেন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের মতো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, করোনার শুরু থেকেই কুষ্টিয়া জেলায় শনাক্তের হার কখনও ২০ শতাংশের ওপরে যায়নি। কিন্তু এখন শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে।

এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভিড় লেগেই আছে। বেডের তুলনায় সেখানে প্রায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড না থাকায় রোগীদের বারান্দায় রাখতে হচ্ছে। রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডের বারান্দা, স্বাস্থ্যকর্মীদের বসার জায়গাটুকুও রোগীর শয্যায় রূপান্তরিত হয়েছে। এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) থেকে জেনারেল হাসপাতালের ১০নং সার্জিক্যাল ওয়ার্ড ও  মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালের একটি অংশকে করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ১০০ শয্যার বিপরীতে এখন রোগীর সংখ্যা ১২০ জন। ওয়ার্ডে নতুন করে আর কোনো রোগী ভর্তির সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে ৩০ জন সাধারণ রোগীকে পাশের মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রোগী বাড়ছে। পরিস্থিতি ভালো না। উপজেলা পর্যায়, এমনকি গ্রাম থেকে রোগী বেশি আসছেন। ২৫০ শয্যা হাসপাতালকে খুবই দ্রুত সময়ে কোভিড ডেডিকেটেড করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আর অক্সিজেন যা আছে এবং যে হারে রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাতে সংকটে পড়তে হতে পারে। কারণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে যেসব রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আনা হচ্ছে, সেসব রোগীর প্রায় সবারই অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।

আবদুল মোমেন আরও বলেন, জেলাজুড়ে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করা ছাড়া রোগী বৃদ্ধির হার কোনোভাবেই কমানো যাবে না। এ বিষয়ে জোর দিতে হবে। 

রাজু আহমেদ/এসএসএইচ