বিশ্বে মহাবিপন্ন মার্বেল বিড়াল রয়েছে মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে। নিশাচর ও প্রায় বিরল প্রজাতির এই প্রাণীটি সাড়ে পাঁচ বছর আগে উদ্ধার করে বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রজাতিগুলোর মধ্যে মার্বেল বিড়াল অন্যতম। দেশীয়ভাবে এই বিড়ালের নাম মর্মল। তবে আঞ্চলিক ভাষায় ডাকা হয় ছোট পাখি খাওড়া নামে।

বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, মার্বেল বিড়াল ফ্যালিডি পরিবারের অন্তর্গত প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘পারডোফেলিস ম্যারমোর‌্যাটা’। প্রথমে দেখলে মেছোবাঘ মনে হবে। দেহের দৈঘ্য ৪৫ থেকে ৬২ সেন্টিমিটার ও লেজ সাড়ে ৩৫ থেকে ৫৫ সেমি লম্বা হয়। লম্বা ও সরু আকৃতির দেহ। পা খাটো এবং ঝোপালো লেজটি অত্যন্ত লম্বা।

এদের শরীরের লোম ঘন ও নরম। দেহ বাদামি-ধূসর থেকে হলদে বা লালচে বাদামি, তাতে ফ্যাকশে বড় বড় ছোপ আছে। পায়ে কালো ফোঁটা এবং মাথা ও ঘাড়ে থাকে কালো রেখা। মাথা ছোট ও গোলাকার, কপাল চওড়া চোখের মণি বড়।

স্বাভাবগতভাবে মার্বেল বিড়াল নিশাচর, বৃক্ষচারী, নিঃসঙ্গ, নিভৃতচারী ও রহস্যময়ী। বিড়ালটির খাদ্যতালিকায় আছে ইদুঁর, পাখি, বাদুড়, কাঠবিড়াল। আবার কখনো সরীসৃপ, ব্যাঙ ও কীটপতঙ্গ ভক্ষণ করে থাকে। চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে তাদের বসবাস। স্ত্রী বিড়াল ৬৬ থেকে ৮২ দিন গর্ভধারণের পর সর্বোচ্চ চারটি বাচ্চার জন্ম দেয়। বাচ্চারা ২১ থেকে ২২ মাসে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। আবদ্ধ অবস্থায় বিড়ালটির আয়ুষ্কাল প্রায় ১২ বছর হয়।

প্রায় অর্ধশত বছর আগে বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের চিরসবুজ বনে মার্বেল বিড়ালকে দেখা যেত। বর্তমানে বাংলাদেশে এই প্রাণীটি অত্যন্ত বিরল এবং বিশ্বে সংকটাপন্ন। বিড়ালজাতীয় প্রাণীদের মধ্যে বিরল ও নিভৃতচারী মার্বেল বিড়াল।

বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সীতেশ রঞ্জন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গভীর জঙ্গলে জোড়ায় জোড়ায় এই বিড়াল বসবাস করে। আগে এই অঞ্চলে অনেক জঙ্গল ছিল। শ্রমিকরা এই প্রাণীকে হত্যা করে খেয়ে ফেলত। চার পাঁচ বছর আগে এক খাসিয়া মেছোবাঘের বাচ্চা মনে করে এনে দিয়েছিল। আমার মেয়ে ড্রাপার দিয়ে দুধ খাইয়েছে। পরে দেখা যায় এটা মর্মর বিড়াল। বইপুস্তক পড়ে জানতে পারলাম, এটা প্রায় বিরল প্রাণী।

তিনি আরও বলেন, ভারতের সীমান্ত এলাকায় পরিত্যক্ত নিরালা চা-বাগান থেকে এটা পাওয়া গেছে। ভারতে গভীর জঙ্গলে দু-এক জোড়া থাকলে থাকতেও পারে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ দেখছে বলে স্বীকার করেনি। এই মারবেল কেট সাড়ে পাঁচ বছর ধরে আমার কাছে আছে।

বিড়ালটা দেখতে মেছোবাঘের মতো। প্রাকৃতিকভাবে ফসল ধ্বংস করে, এমন প্রাণী এরা খায়। এই বিড়াল জঙ্গলের সৌন্দর্য বর্ধন করে। আজ থেকে ২৫ বছর আগে, যখন চা-বাগানের জঙ্গল পরিষ্কার করা হতো, তখন হঠাৎ হঠাৎ দেখা যেত। তবে ১৫ বছরের ভেতরে কেউ দেখেছে বলে এখন স্বীকার করেননি, জানান তিনি।

ওমর ফারুক নাঈম/এনএ