ভোট দিতে এনে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন না কেউ
হালিমন বেগমকে ভোট দিতে কেন্দ্রে এনে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন না কেউ
তখন বিকেল সাড়ে ৩টা। বরগুনার বেতাগী উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নে পশ্চিম করুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশে চেয়ারে বসে কারও অপেক্ষায় আছেন অশীতিপর বৃদ্ধা হালিমন। চোখেমুখে তার ক্লান্তির ছাপ। দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্তি জেঁকে বসেছে তার পুরো শরীরে।
সোমবার (২১ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে গ্যারামর্দন গ্রামের নিজ বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। এরপর বাড়ির পাশের এক ইউপি সদস্য প্রার্থীর কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসেন তাকে। ভোট প্রদান শেষে তারাই তাকে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছেন। এরপর দেড় ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও আর তাদের খোঁজ নেই।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধা হালিমন। কিন্তু কেউ তাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন না। যাদের সঙ্গে এসেছেন ভোট দিতে, তাদের আর আশেপাশে না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
হালিমন বেগম বলেন, ‘আমি ভোট দিতে আমু না, জোর কইর্রা আমারে লইয়াইছে। কতকুন ধইর্রা বইয়া রইছি। কোমর পিঠ ব্যাতা অইয়া গ্যাছে। আমারে এহন কেউ বাড়ি দিয়া আয় না। আমারে কেউ একটু বাড়ি দিয়ায়। মোরে কেডা নেবে এহন বাড়ি। মুই যে ক্যা আইলাম অগো কতায়।’
বিজ্ঞাপন
এরপর বৃদ্ধাই এই আকুতি শুনে এগিয়ে আসেন স্থানীয় আরেক নারী। তিনি বৃদ্ধাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও করুণভাবে বারবার বাড়ি যাওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলেন তিনি। পাশাপাশি সদস্য প্রার্থীর কর্মীদের কথায় ভোট দিতে এসে অনুশোচনায়ও ভুগছিলেন তিনি।
এ দৃশ্য দেখে স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, ‘প্রার্থী বা তার কর্মীরা নির্বাচনের সময়ই যদি এমন প্রতারাণা করতে পারেন তাহলে তিনি বিজয়ী হলে কী করবেন? তা বলা মুশকিল।’
উল্লেখ্য, সোমবার (২১ জুন) প্রথম ধাপে ২০৪ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে বরগুনার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন ইউপিতে ভোট হয়। ইউপিগুলো হলো- বরগুনা সদরের বদরখালী, গৌরিচন্না, ফুলঝুড়ি, কেওড়াবুনিয়া, আয়লাপাতাকাটা, বুড়িরচর, ঢলুয়া (ইভিএম), বরগুনা (ইভিএম) ও নলটোনা।
এছাড়া রয়েছে আমতলীর গুলিশাখালী, কুকুয়া, আঠারগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া (ইভিএম) ও আরপাঙ্গাশিয়া। বেতাগীর বিবিচিনি, বেতাগী (ইভিএম), হোসনাবাদ, মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, কাজিরাবাদ ও সরিষামুড়ি। বামনার বুকাবুনিয়া, বামনা, রামনা ও ডৌয়াতলা এবং পাথরঘাটার কালমেঘা, কাঁকচিড়া ও কাঁঠালতলী ইউনিয়ন।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমএসআর