উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে অগ্নিদগ্ধ ইশরাত জাহান সাথীকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পেয়েছেন আর্থিক সহায়তা। 

জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার উদ্যোগে রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। এর আগে ঠাকুরগাঁও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মো. জাহিদ সাথী কাছে আর্থিক ‍সহায়তা পৌঁছে দেন।

গত মাসে মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে। এক মাসের বেশি সময় ধরে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এক কোণে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে দিন কাটিয়েছেন অগ্নিদগ্ধ সাথী। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করা এই নারীর শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। দগ্ধ হওয়ার পর প্রতিবেশীরা সাথীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করালেও পাশে ছিলেন না স্বামী কিংবা নিকটাত্মীয়রা। ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছিলেন অভিযুক্ত রুবেল হোসেন।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। একদিকে অসহ্য ব্যথা, অন্যদিকে অর্থের অভাব সব মিলিয়ে যেন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলেন সাথী। পরে ‘স্বামীর দেওয়া আগুনে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন সাথী, পাশে নেই কেউ’ এই শিরোনামে ঢাকা পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর জেলার বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সহায়তার হাত বাড়ানো হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মো. জাহিদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মো. জাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অগ্নিদগ্ধ সাথীর অসহায় অবস্থা দেখলে যে কোনো মানুষের মন কেঁদে উঠবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্যার সবসময় আমাদের বলেছেন মানুষের কষ্টে বা বিপদে তার পাশে দাঁড়াতে। সেই আহ্বান থেকেই জেলা যুবদল সাথীর পাশে দাঁড়িয়েছে। এটা কোনো উপকার নয়, এটা মানবিক দায়িত্ব। শুধু সাথী নন, এ জেলার প্রত্যেকটি অসহায় মানুষের পাশে আমরা আছি এবং মহাসচিব স্যারের নির্দেশে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি। 

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই সাথী যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। বিএনপি শুধু আন্দোলনের রাজনীতি করে না, বিএনপি মানুষের হৃদয়ের রাজনীতি করে-মানুষের অশ্রু মুছে দেওয়ার রাজনীতি করে। 

এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও জেলা শাখা উদ্যোগ নিয়ে সাথীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। তাদের সহযোগিতায় রোববার বিকেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি কফিল উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাথীর শারীরিক অবস্থা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। উন্নত চিকিৎসা ছাড়া তার পক্ষে সুস্থ হওয়া কঠিন।

তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি প্রার্থী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সূরা সদস্য দেলাওয়ার হোসেন ভাইয়ের নির্দেশে সাথীকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। আল্লাহর রহমতে সাথী যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে, সেই দোয়া করি।

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সাথীর শারীরিক অবস্থা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল অনেক আগেই। অবশেষে তাকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে, এটা তার জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী ইসরাত জাহান সাথীর জন্ম সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বন্দিকার্ডা এলাকায়। জন্মের পর বাবা মারা যান। অভাবের সংসারে মা বেগম দুই বছর বয়সে সাথীকে শহরের হাজীপাড়া এলাকার ইমাম উদ্দিন-বিলকিস বানু দম্পতিকে দত্তক দেন। এরপর থেকে ইমাম উদ্দিন-বিলকিস বানুর মেয়ের পরিচয়েই বড় হচ্ছিলেন সাথী। ঠাকুরগাঁও মহিলা কলেজে এইচএসসি অধ্যায়নরত অবস্থায় ২০১২ সালে তাকে বিয়ে দেন তার পালিত মা-বাবা। ওই সংসারে তার ৪ বছরের একটি মেয়ে ও ৯ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

এরই মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী রুবেল হোসেনের (৩৫) সঙ্গে। এরপর স্বামী-সন্তান রেখে পালিয়ে আসেন সাথী। পরে আবারো তার পরিবারের লোকজন তাকে বুঝিয়ে আগের স্বামীর কাছে পাঠালে ১৫  দিন সংসার করার পর পালিয়ে যায় তার জন্মদাতা মায়ের কাছে। এরপর রুবেল হোসেনের স্ত্রী-সন্তান থাকার সত্ত্বেও চার বছর প্রেম করে ২০২২ সালের শেষ দিকে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন।

বিয়ের পর তারা ভাড়া বাসায় ওঠেন পৌর শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায়। তবে রুবেলের সঙ্গে তার মা-বাবার কোনো সম্পর্ক নেই। তারা অনেক আগেই ময়মনসিংহ থেকে এসেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ে। শুরুতে সংসার ভালো চললেও বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। প্রতিদিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরা, ঝগড়া-বিবাদ, মারধর সবই ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। চলতি মাসের শুরুর দিকে স্বামী মাদক সেবন করলে বাধা দেন সাথী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। সাথীর চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা দৌড়ে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তবে এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার স্বামী ও পালিত মা-বাবা কেউ দেখতে আসেননি। 

রেদওয়ান মিলন/আরকে