উপরের বাম দিক থেকে রংপুর-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ও জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী এবং রংপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী মোকারাম হোসেন সুজন ও জামায়াত প্রার্থী রায়হান সিরাজী

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ২৩৭টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপি প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শুভাকাঙ্খীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন কিংবা শুভকামনা জানিয়েছেন। তবে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে এবার আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা।

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী তার ফেসবুক পেজে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন। একই আসনে একই নাম ও একই পেশার পরিচয়ে পরিচিত হলেও একটি ভিন্ন আদর্শের নেতার এমন দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষজন।

অন্যদিকে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও আংশিক সিটি) আসনে বিএনপির প্রার্থী মোকাররম হোসেন সুজনের নাম ঘোষণা হওয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন একই আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মো. রায়হান সিরাজী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই বার্তা ইতিবাচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী মনোনীত রংপুর-৫ আসনের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী তার ফেসবুক পেজে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ার জন্য প্রিয় ভাই গোলাম রব্বানীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আমরা দুজনই এই অঞ্চলের মানুষ, একই মাটির সন্তান, শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি এবং মিঠাপুকুরের উন্নয়নের স্বপ্নে একাত্ম। রাজনৈতিক মতাদর্শে পার্থক্য থাকলেও লক্ষ্য এক। সুশাসন, ইনসাফ, ন্যায় ও জনগণের কল্যাণ।’

তিনি আরও লেখেন, ‌‌‌‘আমাদের সমাজে রাজনীতি মানেই অনেক সময় বিভাজন ও বিরোধের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ভদ্রতা, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে রাজনীতি হতে পারে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের হাতিয়ার। আজকের এই প্রেক্ষাপটে আমাদের উচিত হবে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা, যেখানে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নয় বরং নীতি, আদর্শ ও কাজের মানই হবে মূল্যায়নের মানদণ্ড।’

গোলাম রব্বানী লেখেন, ‘আমি জামায়াতে ইসলামী থেকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাই গোলাম রব্বানী ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন। আরও মজার ব্যাপার হলো, আমাদের দুজনের নামই এক। তবে দুই প্রতীকের ভিন্নতা থাকলেও আমাদের লক্ষ্য একই। আর তা হলো, প্রিয় মিঠাপুকুরকে অন্যায়ের অন্ধকার থেকে মুক্ত করে ন্যায়ের আলোয় আলোকিত করা। আমি আশা করি, আমরা একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয় বরং সমাজ পরিবর্তনের সহযাত্রী হিসেবে দেখব।’

জামায়াতের প্রার্থী আরও লেখেন, ‘রাজনীতি যদি নৈতিকতার মঞ্চ হয়, তাহলে প্রতিটি নির্বাচনি প্রতিযোগিতাই হবে চরিত্র, আদর্শ ও সততার এক উজ্জ্বল প্রদর্শনী। আসুন, আমরা সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইয়ের সুস্বাস্থ্য, সাফল্য ও কল্যাণ কামনা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুজনকেই সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের পথে পরিচালিত করুন, যেন আমরা সবাই মিলে একটি সুশাসিত ও সুন্দর মিঠাপুকুর গড়ে তুলতে পারি।’

অন্যদিকে, রংপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোকাররম হোসেন সুজনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাসে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী রায়হান সিরাজী লিখেন, ‘অতীতে চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে এক সঙ্গে রাজনৈতিক ময়দানে পথচলা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, প্রতিযোগী হয়ে নির্বাচনী ময়দানে কাজ করতে চাই। আমাদের মূল লক্ষ্য গংগাচড়া উপজেলার তিস্তা পাড়ের অবহেলিত মানুষ ও রংপুর-১ এর সার্বিক উন্নয়ন।’

তিনি আরও লিখেন, জনগণ আমাকে বিজয়ী করলে আমি উনাকে পাশে রাখব, আর জনগণ উনাকে বিজয়ী করলে আমিও তাকে সহযোগিতা করব, ইনশাআল্লাহ। মহান রব আমাদের সহায় হোন, আমিন।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের এমন ইতিবাচক স্ট্যাটাসকে নেটিজেনরা রাজনৈতিক সৌজন্য ও উদার মনোভাব হিসেবে প্রশংসা করছেন।

রাজনৈতিক মহলে এমন বার্তা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেকে বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে যেখানে পরস্পরবিরোধী দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে, সেখানে এমন সম্মানজনক বক্তব্য একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়। রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে, কিন্তু বিদ্বেষ নয়।

আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগে এমন পারস্পরিক সম্মান ও শুভেচ্ছা দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রার্থী হওয়ায় অভিনন্দন বার্তায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছেন তারই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে সূরা সদস্য দেলাওয়ার হোসেন।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে তার নিজস্ব ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনে দলের মহাসচিব, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, ঠাকুরগাঁওয়ের কৃতি সন্তান জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব প্রার্থী হিসেবে মনোনিত হওয়ায় তাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।’

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে