রংপুরের মিঠাপুকুরে এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে জমির খাজনা কমিয়ে দেওয়াসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুইজন ভুক্তভোগী রংপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম আল-আমিন মিয়া। তিনি মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লতিবপুর এলাকার কামরুজ্জামান জমির খাজনা দিতে যান জায়গীরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা খাজনা বাবদ মোট ৩৩ হাজার ৭৫৯ টাকা দাবি করেন। এর মধ্যে ২৬ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেন কামরুজ্জামান। তবে তাকে দুটি রসিদে যথাক্রমে ১ হাজার ৫৬২ ও ১ হাজার ৮৭৯ টাকার টাকা দেখিয়ে দেওয়া হয়। বাকি টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আল-আমিন মিয়া বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এছাড়া তাহিয়ারপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মোকলেছুর রহমানের কাছ থেকে ৬ হাজার ৮৩ টাকা খাজনা বাবদ গ্রহণ করেন ওই কর্মকর্তা। কিন্তু রসিদে দেখানো হয় মাত্র ১ হাজার ৮৩ টাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, জমির খারিজ, নামজারি, খাজনা প্রদান কিংবা রেকর্ড সংশোধন যে কাজই হোক, টাকা ছাড়া অফিসে কোনো ফাইল নড়ে না। এখন এই ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিণত হয়েছে ঘুষ বাণিজ্যের কেন্দ্রে। যেকোনো সেবা পেতে হলে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আল-আমিনকে ঘুষ দিতেই হয়। তার অফিসে একটি দালাল চক্রও রয়েছে, যারা নানা কৌশলে সেবাগ্রহীতাদের ঘুষ দিতে বাধ্য করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, জায়গীরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মৌখিকভাবে এক রকম খাজনা নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু রসিদে দেখানো হয় অনেক কম টাকা। বাকিটা নিজেরা নিয়ে নেন ভূমি কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা।

ভুক্তভোগী কামরুজ্জামান বলেন, ভূমি কর্মকর্তা আল-আমিন আমার কাছে খাজনা বাবদ ৩৩ হাজার ৭৫৯ টাকা দাবি করেন। আমি ২৬ হাজার ৫০০ টাকা দিই। কিন্তু তিনি দুটি রসিদ দেন একটি ১ হাজার ৫৬২ টাকার, আরেকটি ১ হাজার ৮৭৯ টাকার। বাকি টাকার কথা বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেছুর রহমান বলেন, জমির খাজনা দিতে গিয়ে আমি আল-আমিনকে ৬ হাজার ৮৩ টাকা দিই। তিনি আমাকে মাত্র ১ হাজার ৮৩ টাকার একটি রসিদ দেন এবং বলেন, আপনার খাজনা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকার রসিদের কথা বললে তিনি কিছুই বলেননি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই কর্মকর্তা দুর্নীতির আখড়া গড়ে তুলেছেন। নানা কৌশলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন, কিন্তু রসিদে দেখানো হয় সামান্য পরিমাণ।

অভিযুক্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আল-আমিন মিয়া বলেন, এখন হাতে হাতে টাকা নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবেদন জমা দিলে আমরা জমির খতিয়ান যাচাই করে অনুমোদন দিই। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজমুল আলম বলেন, বিষয়টি আগে জানতাম না, এখন অবগত হলাম। যেহেতু ডিসি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়েছে, স্যার নির্দেশ দিলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এআরবি