জয়পুরহাটে তিনটি হিমাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংরক্ষণ রাখা প্রায় ৫৫ হাজার বস্তা আলু গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বস্তা বীজ আলুও রয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আলু সংরক্ষণের মেয়াদ থাকলেও হিমাগার কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের আগেই আলু বিক্রি করেছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তুলতে গিয়ে এ ঘটনা জানতে পারেন।

জেলার পাঁচবিবি উপজেলার চাঁনপাড়া এলাকার সাথী হিমাগার লিমিটেড, ক্ষেতলালের ইটাখোলা ভাসিলা এলাকার মোল্লা হিমাগার লিমিটেড এবং আয়মাপুর এলাকার হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার থেকে প্রায় ৫৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সাথী হিমাগার লিমিটেড প্রায় ২০ হাজার, মোল্লা হিমাগার লিমিটেড ৩০ হাজার এবং হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার ৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

সাথী হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, সংরক্ষণ করা আলু না পেয়ে কৃষকেরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের কক্ষে ভিড় করেছেন। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা কৃষক ময়নুল ইসলাম বলেন, সাথী হিমাগারে আমি ৬০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। আজ আলু তুলতে এসে জানতে পারলাম আমার আলু বিক্রি করা হয়েছে। হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমাকে আগে কোনো কিছু জানায়নি। আমি আলু ফেরতের দাবি করছি।

পাঁচবিবি উপজেলার জাহিদুল ইসলাম বলেন, সাথী হিমাগারে আমি একশ বস্তা বীজ আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। আলু রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। কিন্তু হিমাগারে গিয়ে দেখি আলু নেই। কাগজপত্রে লেখা ছিল, এক মাস আগে আলু বিক্রি করা হয়েছে। এখন আমি কীভাবে জমিতে আলু লাগাবো?

সাথী হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক শামসুল হক বলেন, এই বছর আমাদের হিমাগারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ২৬ হাজার বস্তা আলু কৃষকরা জোর করে রেখেছিলেন। এ কারণে কিছু আলু নষ্ট হতে শুরু করেছিল। আমরা প্রায় ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছি। আলু উত্তোলনের জন্য হিমাগার থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী কৃষকদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। কেউ বীজ আলু চাইলে আমাদের সংরক্ষিত কিছু বীজ আলু থেকে আলু দেওয়া হচ্ছে।

মোল্লা হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমাদের হিমাগার থেকে প্রায় ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। যেসব ব্যবসায়ীর বেশি আলু ছিল, তাদের অনুমতি নিয়ে অর্ধেক আলু বিক্রি করেছি। আলুর পরিবর্তে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা ৪৫ জন ব্যবসায়ীর লিখিত অনুমতি নিয়ে আলু বিক্রি করেছি।

হাফিজার রহমান বীজ হিমাগারের ব্যবস্থাপক বেলাল সরদার বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের রাখা প্রায় ৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছি। হিমাগারে আলু বেশি ছিল। খাবার আলু উত্তোলনের সময় ৩০ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু তখন কেউ আলু তুলেনি। এখন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু সাংবাদিকদের বলেন, হিমাগার মালিকদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে যে চুক্তি শেষ হওয়ার আগে, অর্থাৎ নভেম্বরের ১৫ তারিখের আগে কেউ কৃষকের আলু বিক্রি করবে না। যারা বিক্রি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কৃষক লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত তিনটি হিমাগারে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। কৃষককে না জানিয়ে আলু বিক্রি করা অপরাধ। আমি নিজে বিষয়টি তদন্ত করেছি। এখন হিমাগার কর্তৃপক্ষ বাজার অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।

চম্পক কুমার/এআরবি