বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বিস্ফোরক আইনে মামলা
ছবি : বাম থেকে- খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, শাহ মো. আবু জাফর, শামসুদ্দীন মিয়া ওরফে ঝুনু।
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। দলটির দুই নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দীন মিয়া ওরফে ঝুনুর সমর্থকরা এক পক্ষ অপর পক্ষকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। এতে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দীন মিয়া ওরফে ঝুনু উভয়কে আসামি করা হয়েছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এর আগে শনিবার মধ্যরাতে বোয়ালমারী থানায় মামলা দুটি নথিভুক্ত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দীন মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে বিভক্ত উপজেলা বিএনপি। গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বোয়ালমারী উপজেলা সদরে দুই পক্ষ পৃথক স্থানে সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে আসার সময় মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় শামসুদ্দীনপন্থি দলীয় কার্যালয়সহ কয়েকটি দোকান, এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ১২টি মোটরসাইকেল।
নাসিরুলের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার বাদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। এ মামলায় প্রতিপক্ষের নেতা শাহবুদ্দীনকে প্রধান আসামি করার পাশাপাশি দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জনতা পার্টির উপদেষ্টা কমিটির এক নম্বর সদস্য শাহ মো. আবু জাফরকে। তৃতীয় আসামি করা হয়েছে পাশের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুকে।
বিজ্ঞাপন
এই মামলার এজাহারে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, শামসুদ্দীনের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার বাদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান। এ মামলায় খন্দকার নাসিরুলসহ ১৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নাসিরুলের পক্ষে দায়ের করা মামলার বাদী বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নেতা শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে আমাদের মিটিংয়ে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। ওই শামসুদ্দিনই শাহ জাফরের লোক, পাশের সালথা উপজেলা থেকে বাচ্চুর লোকজনকে এনে শান্ত বোয়ালমারীকে অশান্ত করেছেন।
শাহ জাফর ও বাচ্চু বোয়ালমারীতে উপস্থিত না থাকলেও তাদের কেন আসামি করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই দুইজন হুকুমদাতা। তারা তাদের লোকজন লেলিয়ে দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করিয়েছে বলে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে।
শামসুদ্দিনের পক্ষে দায়ের করা মামলার বাদী বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, বিএনপি নেতা নাসিরুলের লোকজন আমাদের ওপর কীভাবে হামলা করেছে তা আপনারা দেখেছেন। তারা পিস্তল নিয়ে আমাদের দমনে মাঠে নেমেছিল। আর এসবই হয়েছে নাসিরুলের হুকুমে। তাই তাকে আমরা আসামি করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের লোকজনকে পিটিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী করেছে ওই নাসিরুলের লোকজন।
নিজের নাম আসামির তালিকায় থাকা প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য ও জনতা পার্টির আহ্বায়ক কমিটির এক নম্বর সদস্য শাহ মো. আবু জাফর বলেন, আমি শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি এলাকায়ও যাই না। আমি নাসিরুল বা শামসুদ্দীনের পক্ষের কেউ নই। ঢাকায় অবস্থান করি। তারপরও কেন আমাকে আসামি করা হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, শনিবার রাতে এ মামলা দুটি থানায় নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জহির হোসেন/এআরবি