কুষ্টিয়ায় প্রিন্স নামে দেড় মাস বয়সী এক শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুন) কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। কুষ্টিয়ায় সবচেয়ে কম বয়সী শিশুর করোনা আক্রান্তের ঘটনা এটিই প্রথম। 

করোনা আক্রান্ত শিশুটির বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের বড় স্টেশন এলাকায়। তার বাবার নাম আকাশ। গত সোমবার (২১ জুন) জ্বর ও হালকা শ্বাসকষ্ট নিয়ে বেসরকারি সনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক শিশুটিকে কুষ্টিয়া জেনারেল  হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সোমবারই তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। শিশুটির শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখে সেখানকার চিকিৎসকেরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠান। মঙ্গলবার শিশুটির করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। করোনা শনাক্তর পর শিশুটিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।  

শিশুটির দাদি শিলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রিন্সের গায়ে জ্বর ছিল। দুইদিন আগে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে গতকাল সোমবার সনো হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যাই। সেখানকার ডাক্তার সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি হলে ডাক্তার তার নমুনা পরীক্ষা করলে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। আমাদের পরিবারের অন্য কারো করোনা ছিল না, এখনো নেই। মাত্র দেড় মাস বয়সের এই শিশু বাচ্চার কীভাবে করোনা হয়েছে বুঝতে পারছি না। 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. ইফতেখার হোসেন বলেন, প্রিন্স নামে দেড় মাস বয়সী শিশুটি করোনা আক্রান্ত হয়েছে। তার সঙ্গে তার মা ও দাদি আছে। শিশুটির জ্বর ও শ্বাসকষ্ট আছে। 

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এর আগে স্কুলপড়ুয়া শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু এতো ছোট বা কম বয়সী কেউ আক্রান্ত হয়নি। কী করে শিশুটি সংক্রমিত হলো এখনও জানা যায়নি। তার পরিবারের কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি। শিশুটি কীভাবে সংক্রমিত হলো তা জানার চেষ্টা করছি। সে কার কার সংস্পর্শে এসেছিল, সে ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তাপস কুমার সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত শিশুটিসহ ১২৫ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৫৪১ জন। মারা গেছেন ১৫৭ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৬১ জন।

নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ০১ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১১৯ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ৩৯ জন, দৌলতপুরের ১৪ জন, কুমারখালীর ২৫ জন, ভেড়ামারার ৯ জন, মিরপুরের ২০ জন ও খোকসার ১২ জন রয়েছেন। মৃত তিনজন দৌলতপুর, কুমারখালী ও সদর উপজেলার বাসিন্দা।

এ পর্যন্ত জেলায় ৫৭ হাজার ২৭২ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার ৪৩৩ জনের। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন ৮৪৫ জন।

বর্তমানে কুষ্টিয়ায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৩২৩ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১২৮ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ১৯৫ জন।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে কুষ্টিয়া জেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন চলছে। রোববার (২০ জুন) রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউন আগামী ২৭ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে । 

রাজু আহমেদ/আরএআর