পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভার দাসপাড়া ৬নং ওয়ার্ডের কিশোর আবু বক্কার শুভ (১৪)। বাউফল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের আশপাশেই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তার। তবে শুভ কখনো মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে না। অপবিত্র হয়ে যেতে পারে এই ভেবে মসজিদের বাইরে থেকেই মুসল্লিদের জুতা গুছিয়ে রাখে।

জন্মগতভাবেই মূত্রনালী সংকোচনজনিত জটিলতায় ভুগছে সে। জন্মের পর থেকেই তার প্রসাবের স্বাভাবিক রাস্তা বন্ধ থাকায় চিকিৎসকেরা বিকল্প একটি পথ তৈরি করেন। সেই পথ দিয়েই সারাক্ষণ প্রসাব বের হয়, ফলে সবসময় ভেজা থাকে তার পরনের প্যান্ট। স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত এই কিশোর।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জন্মের ছয় মাস পরেই শুভর মা অন্য একজনের সঙ্গে চলে যান। মায়ের আদর-স্নেহ ছাড়াই বড় হতে থাকা শুভ জানেই না ‘মা’ নামের অনুভূতি কেমন। অসুস্থতা আর অবহেলার মধ্যেই কাটছে তার শৈশব। সঠিক পরিচর্যা না থাকায় মানসিকভাবেও কিছুটা অসুস্থ শুভ। কখনো স্কুলে যায়নি সে। স্বাভাবিকভাবে কথাও বলতে পারে না শুভ।

শুভর বাবা সুমন হাওলাদার হাসপাতালের সামনে ছোট একটি পানের দোকান চালান। প্রথম স্ত্রী চলে যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। শুভ ছাড়াও আরও চার সন্তান রয়েছে তার। অভাবের কারণে দীর্ঘদিন ধরে শুভর চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি।

সুমন হাওলাদার বলেন, আমার ছেলে জন্ম থেকেই অসুস্থ। ওর মা ৬ মাস বয়সেই ফেলে চলে গেছে। যার কারণে শুভর চিকিৎসা ভালোভাবে করাতে পারিনি। ডাক্তার বলেছে চিকিৎসা করালে ঠিক হবে, কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।

চিকিৎসকদের মতে, শুভর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকা জোগাড় করা সুমন হাওলাদারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দাসপাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ইব্রাহিম খলিল বলেন, শুভকে আমরা ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করতে দেখছি। সবসময় ভেজা কাপড়ে থাকে। তবু কখনো কাউকে বিরক্ত করে না। উল্টো মসজিদে আসা-যাওয়ার সময় সবার জুতা গুছিয়ে দেয়। ছেলেটার চিকিৎসা খুব দরকার, না হলে সে কোনোদিন স্বাভাবিক হতে পারবে না।

স্থানীয় মুসল্লি রুবেল হোসেন বলেন, শুভ মসজিদে ঢোকে না এই ভেবে যে সে অপবিত্র হয়ে যেতে পারে। ওর বয়সী বাচ্চারা যেখানে খেলাধুলা করে, সেখানে শুভ কেবল কষ্ট বয়ে বেড়ায়। সমাজের সামর্থ্যবান মানুষরা এগিয়ে এলে ছেলেটা নতুন জীবন পেতে পারে।

উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম আবু সাইদ বলেন, শুভ কোনোদিন মসজিদে প্রবেশ করে না। প্রতিদিন নামাজের সময় মসজিদের মুসল্লিদের জুতা সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখাই তার নিয়মিত কাজ। জুতা ছোঁয়ার আগে পুকুরে গিয়ে হাত ধুয়ে আসে। ভয় থাকে, হাতে যদি প্রসাবের অপবিত্রতা লেগে থাকে। তার পরনের প্যান্ট সব সময়ই ভেজা ও অপবিত্র থাকে। আমরা বহুবার তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, নিষেধও করেছি, কিন্তু সে শোনে না, বুঝশক্তি কম।

স্থানীয় যুবক মোহাম্মাদ বাবু বলেন, শুভর বাবার অবস্থা আমরা সবাই জানি। নিজের পাঁচ সন্তানকে নিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালান তিনি। শুভর চিকিৎসার খরচ তিনি কোনোভাবেই পারবেন না। তাই আমরা চাই মানবিকভাবে সবাই এগিয়ে আসুক।

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, শুভ জন্মগতভাবে ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার বা মূত্রনালীর সংকোচনজনিত জটিলতায় ভুগছে। এটা একটি দীর্ঘ স্থায়ী সমস্যা। মূত্রনালী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মূত্রনালী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে । চিকিৎসার জন্য একাধিক ধাপে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে । দীর্ঘদিন এভাবে থাকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

আরিফুল ইসলাম সাগর/আরকে