বিএনপির সমাবেশ
‘পুলিশ খুলনাবাসীর নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে’
খুলনা মহানগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খুলনা মহানগর বিএনপি। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দলীয় কার্যালয়ের সামনে শহরে খুন, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অবৈধ অস্ত্রের দৌরাত্ম্য এবং পুলিশ প্রশাসনের চরম ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দলটি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘খুলনার পুলিশ প্রশাসন চেয়ারে বসার অধিকার হারিয়েছে। খুলনা আজ অপরাধের নগরীতে পরিণত হয়েছে। ঘরে-বাইরে, রাস্তায়, এমনকি ঘুমের মাঝেও মানুষ খুন হচ্ছে, অথচ পুলিশ প্রশাসন তা ঠেকাতে কোনোভাবে সক্ষম হচ্ছে না।'
বিজ্ঞাপন
তারা বলেন, ‘মানুষ রাতের অন্ধকারে নয়, দিনের আলোতেও আতঙ্কে থাকে। খুলনার মানুষ কোথাও নিরাপদ নয়। পুরো শহরজুড়ে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য উদ্বেগ জনকভাবে বেড়েছে। খুন, হামলা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। অপরাধীরা প্রকাশ্যে অপরাধ করলেও পুলিশ প্রশাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’
মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতারা আরও বলেন, পুলিশ খুলনাবাসীর নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তারা যে চেয়ারে বসে আছে, সেই চেয়ারের ন্যূনতম দায়িত্বও তারা পালন করতে পারেনি। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর খুলনার মানুষ ভেবেছিল এখন তারা নিরাপদে, শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতার ছবি একেবারে উল্টো। নিরাপত্তা দেওয়ার কথা যাদের, তারাই ব্যর্থতার চরম দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। মাদকচক্রের দৌরাত্ম্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনেক এলাকার তরুণরা অবাধে মাদক পাচ্ছে এবং জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে।
বিজ্ঞাপন
খুলনার মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ রয়েছে-যে কারণে অপরাধ দমন করা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রশ্ন তুললে পুলিশ প্রশাসন মামলার সংখ্যা ও চার্জশিটের হিসাব দেখিয়ে দায় এড়িয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেন বক্তারা।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, যুবদল নেতা মানিককে তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হলেও পুলিশ পরিকল্পিতভাবে চার্জশিটে শুধু একজনের নাম দিয়ে বাকিদের রক্ষা করেছে। দৌলতপুরে যুবদল নেতা মাহবুবকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও “মূল খুনিদের” পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এছাড়া চব্বিশের ৩৬ জুলাই পরবর্তী সময়ে খুলনায় সংঘটিত শতাধিক হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত খুনিরা এখনও নিরাপদে রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। খুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থা জনগণকে আতঙ্কে রেখেছে। পুলিশ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় খুলনা এখন ভয়-আতঙ্ক-অস্থিরতার শহরে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে খুলনার মানুষের ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় এর দায় পুলিশ প্রশাসনকেই নিতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানান। একই সঙ্গে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জনগণের অধিকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান নেতারা।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, বেগম রেহানা ঈসা, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ বাবু, হাসানুর রশীদ চৌধুরী মিরাজ, থানা সভাপতিকে এম হুমায়ূন কবির, শেখ হাফিজুর রহমান মনি, মুর্শিদ কামাল, কাজী মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আলী, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, শেখ ইমাম হোসেন, আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস, আসাদুজ্জামান আসাদ, হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, জামাল তালুকদার, সাঈদ হাসান লাভলু, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, শেখ আব্দুল আজিজ সুমন, রবিউল ইসলাম রুবেল, সৈয়দা নার্গিস আলী, অ্যাডভোকেট হালিমা আক্তার খানম, ইঞ্জিনিয়ার নুর ইসলাম বাচ্চু, কে এম এ জলিল, আখতারুজ্জামান তালুকদার সজীব, মিরাজুর রহমান মিরাজ, ইস্তিয়াক আহম্মেদ, মুন্তাসির আল মামুন, আবু সাঈদ শেখ, মো. মজিবর রহমান, মো. শফিকুল ইসলাম শফি, জাকির ইকবাল বাপ্পী, নাসির উদ্দিন, ইফতেখার হোসেন বাবু প্রমুখ।
মোহাম্মদ মিলন/আরকে