টিনের জিনিসপত্রের কদর কমছে, পেশা বদল করছেন কারিগররা
সময় বদলেছে, বদলেছে মানুষের রুচি ও ব্যবহার। সেই সঙ্গে বদলে গেছে গৃহস্থালির জিনিসপত্রের ধরনও। একসময় নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে টিনের তৈরি কলস, হাঁড়ি-পাতিল, থালা, বালতি, ট্রাংকসহ নানা সামগ্রীর কদর ছিল প্রচুর। এখন সেইসব জিনিসের কদর হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন এ পেশার কারিগররা।
জানা গেছে, একসময় সৈয়দপুর শহরে প্রায় ২০০টি ছোট-বড় টিনের জিনিসপত্র তৈরির কারখানা ছিল। সেখানে টিনের পাত কেটে, বাঁকিয়ে ও নকশা করে তৈরি হতো নানা সামগ্রী। এখন সেই কারখানাগুলোর অনেকটাই বন্ধ বা অচল। অনেকে পেশা বদল করেছেন।
বিজ্ঞাপন
আগে দোকানগুলোতে সকাল থেকেই ক্রেতার ভিড় লেগে থাকত। এখন দিনের পর দিন দোকান ফাঁকা পড়ে থাকে। টিনের জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিক, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রী, যা দেখতে আকর্ষণীয়, হালকা এবং টেকসই।
সৈয়দপুর শহরের চৌধুরীপাড়ার কারিগর হাসেম আলী বলেন, আগে সকালে কাজ শুরু করলে বিকেল নাগাদ সব বিক্রি হয়ে যেত। এখন সারাদিন বসে থাকি। আগের মতো কাজের চাপও নেই, আয়ও নেই।
বিজ্ঞাপন
আরেক কারিগর আব্দুল জব্বার বলেন, আগে কাজ বেশি থাকত, তখন বেতনও ভালো পেতাম। এখন কাজ কমে গেছে, তাই আয়ও কম। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ কারিগর রহিম আলী বলেন, বয়স হয়েছে, অন্য কাজ করতে পারি না। এখন যা টুকটাক কাজ পাই, তাতেই কোনোভাবে চলছি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফ মিয়া বলেন, আগে টিনের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ছিল অনেক। এখন মানুষ দালানকোঠায় থাকে, তাই প্লাস্টিকের জিনিসই বেশি নেয়। আগে বিয়ের সময় ছোট টিনের ট্রাংক কিনত, এখন সবাই প্লাস্টিক বা কাপড়ের ব্যাগ নেয়।
আরেক ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, আগে বছরে কোটি টাকার ব্যবসা হতো। এখন অনেকে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। টিনের জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো বিক্রি হয় না।
নীলফামারী জেলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কর্মকর্তা মো. নুরেল হক বলেন, আমাদের কাজ শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা। টিনশিল্পীদের আমরা প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে সহায়তা করছি। প্লাস্টিকের প্রভাবে টিনপণ্যের চাহিদা কমলেও এটি পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। আমরা আধুনিক নকশা ও নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এ শিল্পটিকে আবারও চাঙ্গা করার চেষ্টা করছি।
আরএআর