রংপুরের পীরগঞ্জের কনা আক্তার নামে এমপিওভুক্ত একজন শিক্ষিকা ৬০০ কিলোমিটার দূরত্বের দুটি প্রতিষ্ঠানে একই সময়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন। শুধু তাই নয়, পৃথক ইনডেক্স নম্বরে তিনি দুটি প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তও হয়েছেন। 

এ ঘটনায় গত ১৬ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে পীরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

উপজেলার রসূলপুর মাহতাবিয়া দ্বি-মূখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওই শিক্ষিকা বর্তমানে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার একটি মাদরাসায় প্রভাষক (বাংলা) হিসেবে চাকরি করছেন। ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সাল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে এসেছেন।

অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জের রসূলপুর মাহতাবিয়া দ্বি-মুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজে সহকারী শিক্ষিক (বাংলা) পদে কনা আক্তার ২০১৫ সালের ৯ মে যোগদান করেন। তার এমপিওভুক্ত ইনডেক্স ১১৩৬৭৯৭। এরপর তিনি ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর ‘এনটিআরসি’ এর প্রভাষক (বাংলা) হিসেবে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মৌলভীবাজার ফারুকিয়া সিনিয়র আলিম মাদরাসায় যোগদান করে পৃথক ইনডেক্স নম্বরে (গ০০৫৩৭২৯) এমপিওভুক্ত হন।

কনা আক্তার তথ্য গোপন করে তার পূর্বের প্রতিষ্ঠানে ইস্তফা না দিয়ে উল্লেখিত দুটি প্রতিষ্ঠানেই একই সময়ে শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেখিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৪ মাস পর ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার পূর্বের কর্মস্থল থেকে ইস্তফা দেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রসূলপুর মাহতাবিয়া দ্বি-মূখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান পীরগঞ্জের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই সঙ্গে পৃথকভাবে দুটি ইনডেক্সভুক্ত হলেও একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি সরকারি বেতনভাতা উত্তোলন করছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগকারী শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ওই শিক্ষিকা তথ্য গোপন করে অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছি।

শিক্ষিকা কনা আক্তার বলেন, পৃথক ইনডেক্সে এমপিও হলেও আমি শুধু একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি অংশের বেতনভাতা উত্তোলন করেছি। পীরগঞ্জ থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করায় ইস্তফা দিতে দেরি হয়েছে। 

তথ্য গোপনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, ২০২২ সালে পরীক্ষার ডিউটি দেওয়া নিয়ে অভিযোগকারীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। উনি আমার মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করেছিলেন। পুলিশ তাকে এ ঘটনায় আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছিল। আমি তার কারণেই রংপুর থেকে এত দূরে এসেছি। আমি ভেবেছিলাম সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তারপরও আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। ওই স্যার (মোস্তাফিজার) স্থানীয় হওয়ায় আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে আসছেন।  

রসূলপুর মাহতাবিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবেদ আলী বলেন, তথ্য গোপন করায় কনা আক্তারের বিরুদ্ধে একজন শিক্ষক অভিযোগ করেছেন। তদন্তের আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

এ ব্যাপারে জানতে পীরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান বলেন, আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। সেটির সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে চাকরিবিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে