ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় ৯ দিনের লকডাউন চলছে। লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বুধবার (২৩ জুন) সকালে পাবনার বাসস্ট্যান্ডগুলোতে আগের মতোই যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। তবে বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এ সময় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

মঙ্গলবার (২২) সকাল থেকে সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। প্রথম দিনে জেলার বাস মালিক ও শ্রমিকরা বিষয়টি না জানায় কিছু দুরপাল্লার বাস পাবনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে বুধবার (২৩ জুন) সকাল থেকে পাবনা থেকে ঢাকাগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। 

পাবনা জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবুল আহসান খান রেওন বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে হঠাৎ ঢাকাগামী বাস বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বুধবার সকালে পাবনা বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাবনা থেকে ঢাকাগামী কিছু মানুষ হাতে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। এদের মধ্যে রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, গার্মেন্টস শ্রমিক এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন। 

পাবনা বাস টার্মিনালে কথা হয় গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ইশিতা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলাম। ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরার জন্য শহরে এসে শোনেন, বাস বন্ধ। বিষয়টি অফিসকে জানালে তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কারখানায় উপস্থিত হওয়ার তাগিদ দেন। তাই নিরুপায় হয়ে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছেন। 

কথা হয় নির্মাণ শ্রমিক আফজাল হোসেন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার আম্মা হার্ট অ্যাটাক করে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এই মুহূর্তে আমার বাড়ি যাওয়া খুব দরকার। কিন্তু ভোর থেকে গাড়ির জন্য বসে আছি। কোনো গাড়ি নেই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়ন ইসলাম (২৪) বলেন, সাভার এলাকায় মেসে থেকে পড়ালেখা করি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও নিয়মিত প্রাইভেট পড়ি। চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কয়েকদিনের জন্য মৌসুমি ফল খাওয়ার জন্য বাড়ি আসছিলাম। এখন যাওয়ার পথে দেখছি কোনো পরিবহন চলছে না। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। বাস ছাড়া অন্যকোনো যানবাহনে যাওয়া ব্যয়বহুল। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

পাবনা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম বাবলু জানান, কিছু জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত লকডাউন ঘোষণা করা হয়। বুঝতে না পেরে প্রথম দিন কিছু বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে এখন ঢাকাগামী আর কোনো বাস চলছে না।

পাবনা জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবুল আহসান খান রেওন জানান, প্রথম দিন বুঝে উঠতে না পেরে বাস বন্ধ রাখা সম্ভব হয়নি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আমরা বাস কোচ বন্ধ করে দিই। 

পাবনার নবাগত জেলা প্রশাসক মো. বিশ্বাস রাসেল ঢাকা পোস্টকে জানান, বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে বিধিনিষেধের বিষয়টি জানানো হয়েছে। সরকারি নিষেধের পরও যারা ঢাকা রুটে বাস কোচ চালু রাখবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী এবং গোপালগঞ্জে মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণার কারণে ঢাকার কোনো রুটে দূরপাল্লার বাস রাজধানীতে ঢুকতে পারবে না। এ কারণে জেলা থেকে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক সমিতি।

রাকিব হাসনাত/এসপি