‘আমি নওগাঁয় চাকরি করি। সকাল ৮টায় ছুটি হয়েছে। ৪৫ দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাব। দুপুরে বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন কাউন্টারে ঘুরে দেখলাম দূরপাল্লার কোনো বাস যাচ্ছে না। এখন কীভাবে বাড়ি যাব দুশ্চিন্তায় আছি।’ কথাগুলো বলছিলেন বিজিবি সদস্য আতাউর রহমান।

ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় ৯ দিনের লকডাউন চলছে। লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বুধবার (২৩ জুন) দুপুরে নওগাঁ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আগের মতোই যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। তবে বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

নওগাঁ জেলা মোটর মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার (২২) সকাল থেকে সারাদেশে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। প্রথম দিনে জেলার বাস মালিক ও শ্রমিকরা বিষয়টি না জানায় কিছু দূরপাল্লার বাস নওগাঁ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে বুধবার (২৩ জুন) সকাল থেকে নওগাঁ থেকে ঢাকাগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।  

এদিকে হঠাৎ ঢাকাগামী বাস বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বুধবার দুপুরে নওগাঁ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামগামী কিছু যাত্রী হাতে ব্যাগ নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। এদের মধ্যে শ্রমিক এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন। 

নওগাঁ বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় এক বেসরকারি কর্মচারীর সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, চারদিনের ছুটি নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি রাণীনগর এসেছিলেন। ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরার জন্য শহরে এসে জানতে পারেন বাস বন্ধ। বিষয়টি অফিসকে জানালে তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অফিসে উপস্থিত হওয়ার তাগিদ দেন। তাই নিরুপায় হয়ে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রামের আম ব্যবসায়ী কিবরিয়া মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত রোববার (২০ জুন) সাপাহারে এসেছি ব্যবসার কাজে। সকালে জানতে পারি আমার ছেলে খেলতে গিয়ে পা ভেঙে অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। এই মুহূর্তে আমার বাড়ি যাওয়া খুব দরকার। কিন্তু সাপাহার থেকে গাড়ির জন্য নওগাঁ শহরে এসে দেখি কোনো গাড়ি নেই।

গার্মেন্টসকর্মী তপন ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশুলিয়া এলাকায় চাকরি করি। কয়েক দিনের জন্য মৌসুমী ফল খাওয়ার জন্য বাড়ি এসেছিলাম। এখন যাওয়ার পথে দেখছি কোনো বাস চলছে না। 

নওগাঁ মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম জানান, কিছু জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে। বুঝতে না পেরে প্রথম দিন কিছু বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তবে এখন ঢাকাগামী আর কোনো বাস চলছে না।

নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এসএম মতিউজ্জামান মতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমরা দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে দিয়েছি।  

এস আর ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানেজার কে এম মোরশেদ ঢাকা পোস্টকে জানান, বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে বিধিনিষেধের বিষয়টি জানানো হয়েছে। সরকারি নিষেধ থাকায় নওগাঁ থেকে আমাদের কোনো পরিবহন ছেড়ে যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী এবং গোপালগঞ্জে মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণার কারণে দূরপাল্লার কোনো বাস রাজধানীতে ঢুকতে পারবে না। এ কারণে জেলা থেকে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক সমিতি।

শামীনূর রহমান/আরএআর