আহত মায়ের জন্য রাখা হয় রাফিউলের মরদেহ, পরে দাফন
রাজধানীতে ভূমিকম্পের সময় ভবনের রেলিং ভেঙে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি (২১)। শনিবার (২২ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মরদেহ পৌঁছায় বগুড়ার শহরের গোয়াইল রোডের বাড়িতে। উঠোনজুড়ে তখন শুধু কান্না আর শোক।
বাদ জোহর সেউজগাড়ী সেন্ট্রাল হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় রাফিউলের জানাজা। তবে জানাজা শেষে কফিনটি নামানো হয়নি, অপেক্ষা ছিল মায়ের জন্য। একই ঘটনায় গুরুতর আহত তার মা নুসরাত জাহান মিতাকে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বগুড়ায় আনা হয়। মাথায় গুরুতর আঘাত থাকায় তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।
বিজ্ঞাপন
পরিবারের সদস্যরা জানান, মা যেন শেষবারের মতো ছেলেকে একনজর দেখতে পারেন, এই আশাতেই মরদেহটি দাফন না করে রাখা হয়েছিল। হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্স থামতেই কফিনটি ধীরে ধীরে তুলে ধরা হয় মায়ের সামনে। তবে সেই মা আদৌ কিছু দেখতে পেরেছেন কিনা, তা কেউ জানেন না। তবে সেই মুহূর্তের নিস্তব্ধতা ও হৃদয়বিদারক দৃশ্য কোনো দিন ভুলবার নয়।
রাফিউল ইসলাম রাফির চাচা আব্দুস সামাদ বলেন, বাদ জোহর জানাজা হয়েছে। কিন্তু তার মাকে একনজর দেখানোর জন্য লাশটি রাখা হয়েছিল। দেখানোর পর বাদ আসর আঞ্জুমান কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি, শুধু শুনেছেন। পরে দাফনের খবরের ধাক্কা সামলাতে পারবেন না- এই আশঙ্কায় তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কফিন বহনের সময় বারবার ভেঙে পড়েন রাফির বাবা ওসমান গনি। চোখ ভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার রাফিকে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলাম। কেন আমার ছেলেটা এত তাড়াতাড়ি চলে গেল।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ভূমিকম্পের মুহূর্তে মা–ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলেন বংশালের কসাইটুলির একটি মাংসের দোকানের পাশে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কাঁপুনিতে ভেঙে পড়ে ওপর তলার রেলিং। আর চিরদিনের মতো থেমে যায় একটি সম্ভাবনাময় জীবনের যাত্রা।
আরএআর