মোবাইল স্টোরিটেলিং শিখে উপকূলের গল্প তুলে ধরছে শ্যামনগরের তরুণরা
উপকূলীয় অঞ্চলের তরুণদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মোবাইল স্টোরিটেলিংয়ের নতুন ধারার দক্ষতা। মোবাইল ফোন দিয়েই নিজেদের জীবন, পরিবেশ ও সম্প্রদায়ের গল্প তুলে ধরতে দুই দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ১৪ জন কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের জেন্ডার–রেসপন্সিভ কোস্টাল অ্যাডাপ্টেশন (জিসিএ) প্রকল্প যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে। ২৬ ও ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ভিডিও, ছবি ও সংক্ষিপ্ত গল্পের মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ এবং কমিউনিটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার কৌশল শিখেছে।
বিজ্ঞাপন
উদ্বোধনী সেশনে ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশন মো. আবদুল কাইয়্যুম বলেন, “এই প্রশিক্ষণের পরে আমরা দ্বিতীয় ধাপে যেতে চাই, যেখানে তরুণদের তৈরি গল্পগুলো নিয়মিত গাইডেন্স ও ফলোআপ সহায়তা পাবে। দীর্ঘমেয়াদে এই তরুণ গল্পকারদের শক্তিশালী করে তুলতে পারলে উপকূলীয় অঞ্চলের কণ্ঠস্বর আরও দৃশ্যমান হবে, প্রভাবও বাড়বে।”
জিসিএ প্রকল্পের ন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আবদুল হান্নান মনে করেন, তরুণদের নেতৃত্বই পারে যোগাযোগের ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করতে। তিনি বলেন, “সহজলভ্য ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে উপকূলীয় মানুষের গল্প আরও বেশি করে তুলে ধরা দরকার। সঠিক নির্দেশনা ও দক্ষতা পেলে তরুণেরা কমিউনিটি-ভিত্তিক অভিযোজন কার্যক্রমে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম।”
বিজ্ঞাপন
কর্মশালায় ‘টেকনিক্যাল স্কিলস—মোবাইল ভিডিওগ্রাফি অ্যান্ড ফটোগ্রাফি’ সেশনটি পরিচালনা করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল কাবিল খান। তিনি বলেন, “মোবাইল স্টোরিটেলিং তরুণদের হাতে দিচ্ছে তাঁদের চারপাশের বাস্তবতা ধারণ করার সহজ ও কার্যকর উপায়। মাত্র একটি মোবাইল ফোন দিয়েই তারা পানি, জেন্ডার ও স্থিতিস্থাপকতার মতো বিষয়গুলো স্পষ্ট ও জীবন্তভাবে তুলে ধরতে পারে।”
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা শিখেছে কীভাবে মোবাইল ক্যামেরায় গল্পধর্মী ফুটেজ ধারণ করতে হয়, কীভাবে ছোট ভিডিও সম্পাদনা করলে তা দর্শকের কাছে প্রভাব তৈরি করতে পারে, এবং কীভাবে কমিউনিটির সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরার মতো গঠনমূলক গল্প তৈরি করা যায়।
সংগঠকরা জানিয়েছেন, দুই দিনের প্রশিক্ষণ শেষে তরুণদের জন্য মেন্টরশিপ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের গল্প আরও উন্নত করার সুযোগ পাবেন, স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি স্ক্রিনিং আয়োজন করতে পারবেন এবং এমন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবেন—যেখানে তাদের তৈরি কনটেন্ট নীতিনির্ধারকদের কাছেও পৌঁছাতে পারে।
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া এক কিশোরীর ভাষায়, মোবাইল ফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়—এখন এটি হয়ে উঠছে পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাদের আশা, এই দক্ষতা ভবিষ্যতে উপকূলীয় মানুষের জীবনযাপন, জলবায়ু ঝুঁকি এবং অভিযোজনের বাস্তব গল্প দেশজুড়ে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।