বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূলফটকে তালা, ভেতরে ইউএনও-ওসিসহ অবরুদ্ধ কর্মকর্তারা
ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণসহ ৫ দফা দাবিতে এবার ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল গেটে তালা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত), ওসিসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রথমে বোরহানউদ্দিন উপজেলায় অবস্থিত ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন কয়েকশত ছাত্র-জনতা। এ সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধের দাবিতে কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান তারা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল গড়িয়ে এলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধে তাদের আহ্বানের কোনো সুরাহা না হওয়ায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধান গেটে তালা দিয়ে বাহিরে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বিজ্ঞাপন
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ভোলা-বরিশাল সেতুসহ ৫ দফা দাবিতে গত ২৮ নভেম্বর ঢাকা শাহবাগের সমাবেশে ঘোষিত ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষে ভোলা থেকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।
তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার সকাল ১১টায় ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে প্রথমে সমাবেশ করেন। সেখান থেকে ট্রাক ও মোটরসাইকেলে কয়েকশত আন্দোলনকারী বোরহানউদ্দিন শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র ও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অভিমুখে যাত্রা শুরু করে বোরহানউদ্দিন আবদুল জব্বার কলেজের মাঠে গিয়ে ফের তারা জড়ো হন। এদিকে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বোরহানউদ্দিন ও লালমোহন উপজেলার আন্দোলনকারীর।
বিজ্ঞাপন
তারা আরও জানান, বোরহানউদ্দিন আবদুল জব্বার কলেজের মাঠ থেকে সবাই একত্রিত হয়ে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার হেঁটে, ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে গিয়ে কয়েকশ মানুষ অবস্থান নিয়ে তাদের দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দেন এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান।
বিক্ষোভ চলাকালে বিদ্যুৎ প্লান্টের প্রধান প্রকৌশলী বীরেশ্বর সাহা ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং জানান, বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার ক্ষমতা তাদের নেই। পরে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ১০ সদস্যের একটি টিমের সঙ্গে প্লান্ট কর্তৃপক্ষের বৈঠকেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ না করায় গেটে তালা দিয়ে বাহিরে অবস্থান নেন তারা। এ সময় ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে যান বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রনজিৎ চন্দ্র দাস, ওসি সিদ্দিকুর রহমানসহ প্লান্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আন্দোলনকারী মেহেদী হাসান বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে বোরহানউদ্দিন ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘেরাও করেন সর্বস্তরের ছাত্র জনতা। আমাদের ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হলেও তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করেননি। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান গেটে তালা দেওয়া হয়েছে, ভেতরে ছিলেন ইউএনও-ওসিসহ অন্যান্যরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রনজিৎ চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে ছিলাম তখন আন্দোলনকারীরা গেটের বাহিরে তালা দিয়েছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। আমরা প্লান্টের ভেতরে ২ ঘণ্টা আটকা ছিলাম। পরে অন্য গেট দিয়ে বের হয়েছি। প্লটের মূল ফটকে তালা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণসহ ৫ দফা দাবিতে ভোলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ নভেম্বর ভোলার চরফ্যাসন উপজেলা থেকে একদল শিক্ষার্থী পায়ে হেঁটে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করেন। তারা হেঁটে এবং তেঁতুলিয়া, কালাবদর ও পদ্মা নদী সাঁতরে ১১ দিন পর ঢাকায় পৌঁছান। ঢাকায় এক সপ্তাহ অবস্থানের পর ২৮ নভেম্বর শাহবাগে মহাসমাবেশের মধ্যদিয়ে ঢাকার কর্মসূচি শেষ করেন এবং সেখানেই সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা।
তাদের ৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ, পাইপলাইনে ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ, গ্যাস ভিক্তিক শিল্প কলকারখানা স্থাপন, মেডিকেল কলেজ স্থাপন, ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।
মো. খাইরুল ইসলাম/এমএন