হবিগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমান
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যেই সিলেট বিভাগে বড় ধরনের চমক দিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে দলটির এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন খ্যাতিমান সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমান। আগের প্রার্থী মাওলানা মুখলিছুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় দলের সিদ্ধান্তে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের জরুরি বৈঠকে তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের।
বিজ্ঞাপন
ওয়ালী উল্লাহ নোমান তার সাংবাদিক জীবনে বহু আলোচিত প্রতিবেদন করেছেন। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারি নিয়ে তার প্রকাশিত প্রতিবেদন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও বড় অবদান রয়েছে। সাংবাদিকদের সেই অবদানের প্রতীক হিসেবেই আমরা অলিউল্লাহ নোমানকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছি। ফ্যাসিবাদ বিদায়ের প্রতীক হিসেবেও তাকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ওলিউল্লাহ নোমান একজন মজলুম ব্যক্তিত্ব। তিনি দীর্ঘদিন কারাবরণ করেছেন এবং নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের নৈতিকতা ও সাহস ধরে রেখেছেন। তিনি শুধু একজন সাংবাদিক নন, বরং সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র- যিনি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সবসময় লড়ে গেছেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি এক শক্তিশালী কণ্ঠস্বর ছিলেন। তার রিপোর্টিং ছিল সাহসী, বস্তুনিষ্ঠ ও জনস্বার্থকেন্দ্রিক।
আমরা বিশ্বাস করি, হবিগঞ্জ-৪ আসনের মানুষের জন্যও তিনি দায়িত্বশীল ও কার্যকর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এ কারণেই তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। পাশাপাশি তার পরিবার এবং তিনি নিজে এ অঞ্চলে সুপরিচিত। আমরা আশা করি, তিনি আসনটি জয় করে জনগণের সেবা ও ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। আগামীকাল থেকেই তিনি নির্বাচনী এলাকায় আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন।
এদিকে মনোনয়ন পরিবর্তনের পর হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুখলিছুর রহমান ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন- জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের প্রতিটি ইউনিয়নে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় নিয়মিত গণসংযোগ করেছি। মাঠের মানুষ, সাধারণ ভোটার এবং সংগঠনের কর্মীদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা, সাড়া ও উৎসাহ পেয়েছি- তা আমার জীবনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি।
তিনি আরও লিখেন, বৃহত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সংগঠনের কৌশলগত বিবেচনায় কেন্দ্রীয় সংগঠন সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমানকে এমপি প্রার্থী করার বিষয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করে এবং আমার সম্মতিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনের সিদ্ধান্ত, দেশের স্বার্থ এবং ইসলামী রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি আনুগত্য থেকে আমি এই সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।
মাওলানা মুখলিছুর রহমান আরও লেখেন, আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই- ব্যক্তিগত পদ বা মনোনয়ন নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য ন্যায়নীতি, সুশাসন এবং ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। তাই আমি এবং আমার সহকর্মীরা পূর্বের মতোই পূর্ণ শক্তি নিয়ে দাঁড়িপাল্লার বিজয়ের জন্য মাঠে কাজ চালিয়ে যাব।
তিনি চুনারুঘাট ও মাধবপুরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ভুলে, আবেগ ও বিভ্রান্তির ঊর্ধ্বে উঠে সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার ইটাখোলা গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা খ্যাতিমান সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান, সিলেট বিভাগের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা সানাউল্লাহ (র.) যিনি বৃহত্তর হবিগঞ্জে পীর সাহেব হুজুর হিসেবে পরিচিত এবং মরহুমা রহিমা বেগমের সন্তান।
নোমান ইটাখোলা ফাজিল মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক থেকে আলিম পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর শায়েস্তাগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করে পুরো হবিগঞ্জ জেলা কেন্দ্র থেকে একমাত্র উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। পরে তিনি সোনাকান্দা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল (হাদিস) এবং মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা থেকে কামিল (আরবি সাহিত্য) সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে বিএসএস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস ডিগ্রিও অর্জন করেন।
পেশাগত জীবনে তিনি দৈনিক ইনকিলাব এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লন্ডনে নির্বাসিত অবস্থায় তিনি আমার দেশ-এর অনলাইন ভার্সন চালু করেন। ২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমার দেশ পুনরায় চালুর পর তিনি দেশে ফিরে কাজে যোগ দেন।
মাসুদ আহমদ রনি/এআরবি