অগ্রহায়ণের মধ্যভাগে শীত পড়ছে রংপুরে। ভোর আর সন্ধ্যার কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি জানান দিচ্ছে তীব্রতা বাড়বে শীতের। তাই শীতের কাপড় আর ঠান্ডা নিবারণে কম্বল নিয়ে কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে এসেছেন রবিউল ইসলাম। পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত সমমনা ইসলামী আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে একদিন আগেইে এসেছেন তিনি। 

লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে মঞ্চের সামনে থেকে নিজ দলের নেতাদের কথা শুনতে চান রবিউল। তিনি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। রবিউলের মতো আরও অনেকেই সমাবেশের আগের রাতেই রংপুরে এসেছেন।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। সেখানে সমাবেশ মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে অনেকেই কুয়াশাময় রাতে শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে সমবেত হয়েছেন।

৩৫ বছর বয়সী রবিউল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এর আগে রংপুরে আট দলের সমাবেশ একসাথে কখনো হয়নি। এবার নির্বাচন ঘিরে এই সমাবেশে পুরো বিভাগের আট জেলার আট দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষজন আসবে। লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে যদি পেছনে পড়ে যাই, তাহলে মনের ইচ্ছে পূরণ হবে না। সামনে থেকে নেতার কথা শোনা আর দেখার যে অনুভূতি তা তো বলে প্রকাশ করা যাবে না। এজন্য একদিন আগেই চলে এসেছি।

তিনি আরও জানান, সঙ্গে শীত নিবারণে উষ্ণ কাপড় আর কম্বল এনেছেন। শুকনো খাবার আর রেডিও এনেছেন তিনি। সমাবেশস্থল জনসমুদ্রে পরিণত হওয়ার আগেই আসতে পেরে তার ভালো লাগছে বলেও জানান। 

মাঠে কথা হয় হাতপাখা হাতে নিয়ে আসা আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই সমাবেশ হবে রংপুর বিভাগের সর্ববৃহৎ সমাবেশ, যা এর আগে কোনো দিন হয়নি। এই সমাবেশ রংপুর শহরে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে। তাই একদিন আগে বিকেল থেকেই দূর-দূরান্তের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। আমরা মনে করছি সকাল হতে হতে মাঠ জনসমাগমে পূর্ণ হয়ে উঠবে।

হাতে চিড়া ভাজা, মোয়া আর মুড়ি নিয়ে কয়েকজন বসেছেন মঞ্চ থেকে একটু দূরে। শীতের হিমেল হাওয়া থেকে বাঁচতে প্রত্যেকের সাথে আছে উষ্ণ কাপড়, জ্যাকেট আর কানটুপি (মানকি টুপি)। মোবাইল ফোনে ইউটিউবে প্রিয় নেতাদের বক্তব্য  শুনছেন তারা।  

সেখানে কথা হলে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী জাহিদ, মুজাহিদ ও তাওহীদ বলেন, আট দলের সমাবেশে আমাদের নেতাদের যেন কাছে থেকে দেখতে পাই, তাই একদিন আগেই মাঠে হাজির হয়েছি। সঙ্গে যা যা প্রয়োজন সবই এনেছি আমরা। খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপনে একটু কষ্ট হলেও দ্বীনের জন্য, ইসলামের জন্য, দলের জন্য এসব কষ্ট আমাদের কাছে কিছুই না।

সমাবেশের দিন মাঠে শৃঙ্খলা রক্ষায় এক হাজারের বেশি কর্মী দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু একদিন আগে থেকেই নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করায় দায়িত্ব পালনে মাঠে আছেন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতরা।

ইসলামী আন্দোলনের রংপুর মহানগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা খবর পেয়েছি ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা নীলফামারী, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আশা শুরু করছে। সকাল বেলা এসে কোনোভাবেই জায়গা পাওয়া যাবে না। এ কারণে অনেকেই আগাম চলে এসেছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠবে মাঠ।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত আট দলের রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি শেষ করেছে আয়োজক কমিটি। সমাবেশস্থলসহ আশপাশের সড়ক ও অলিগলিমুখে ২০০ শতাধিক মাইক লাগানো হয়েছে। গাড়ি পার্কিংয়ে দশটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও মাঠে শৃঙ্খলা রক্ষায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে দায়িত্ব থাকবেন আট দলের নেতাকর্মীরা।  

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ্ মাঠে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন আট দলের নেতারা। এ সময় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম জানান, রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ৮ দলের নেতা ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম। সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।

বক্তব্য দেবেন জামায়াতের নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, নেজামে ইসলামী পার্টির নায়েবে আমির মুফতি মোখলেছুর রহমান কাসেমী, সাংগঠনিক সচিব হাফেজ মাওলানা আবু তাহের খান, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সংগঠক মুফতি মাহমুদুল হাসান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সালাহউদ্দিন, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামসহ ৮ দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর