‘বাড়ি থাকি হাফ মাইল দূরে স্কুল, ব্রিজের অভাবে যেতে হয় তিন মাইল ঘুরে। সময় লাগে বেশি, পায়ে হাঁটি যেতে খুব কষ্ট হয়। সাঁকো দিয়ে যেতে ভয় লাগে, কখন জানি পানিত পরি যাই। তাই এই মরণ ফাঁদ দিয়ে বাধ্য হয়ে যাতায়াত করছি। একটা ব্রিজ হলে আমাদের স্কুলে যেতে সুবিধা হতো।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিল কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার বলদিপাড়া এলাকার ৫ শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম খাতুন।

নুরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলে, ‘বুড়ি তিস্তা পার হলেই আমাদের বিদ্যালয়ের খালের ওপর বাঁশের সাঁকো, তাও ভাঙা। ভয় করে কখন জানি পানিতে পরে যাই।’ শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলে, ‘আমি একদিন এই সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে পানিতে পরে গিয়েছিল।’

একই এলাকার ইমদাদুল মিয়া (৪০) বলেন, ‘৫ থেকে ৬ বছর আগে যখন বুরি তিস্তা খাল তৈরি করে তখন থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। বদলিপাড়া, মৌলভী পাড়া,ও জুনাই ডাঙ্গা এলাকার কয়েক হাজার মানুষ এই সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। স্কুলে ছেলে-মেয়েরা এই সাঁকো দিয়ে যেতে চায় না, কখন জানি পানিতে পরে যায়।

জুনাই ডাঙ্গা এলাকার সাইফুল ইসলাম নামে এক অবিভাবক বলেন, ব্রিজের অভাবে রাস্তাটা ব্যবহার করতে পারছি না। বাড়ি থেকে শহর যেতে ১৫ মিনিটের পথ ঘুরে যেতে লাগে এক ঘণ্টা। আমাদের ছেলে মেয়েরা জীবন হাতে নিয়ে ভাঙা সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করে। তাদের নিয়ে সব সময় চিন্তায় থাকি কখন যেন কোনো দুঘর্টনা ঘটে। অ্যাম্বুলেন্স বা কারো বাড়িতে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজেই ঢুকতে পারে না। এখানে গাড়ি আসলে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। আমরা তিন গ্রামের প্রায় ৩ হাজার মানুষ পৌরবাসী হলেও নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অথচ প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় আমরা কর দিই।

জানা গেছে, পৌরসভা হওয়ার আগে বলদি পাড়া, মৌলভী পাড়া, জোনাই ডাঙ্গা গ্রামগুলো ছিল গুনাইগাছ ও ধামশেনীর ইউনিয়নের অন্তর্গত। বর্তমানে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত হলেও পৌর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। অথচ কর দিতে হচ্ছে পৌরসভায়। উলিপুর পৌরসভা ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় এবং ২০২২ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মূল দাবি দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ এবং পৌর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

হজরত ফাতিমা (রা.) স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজ রুহুল আমিন বলেন, ‘তিন গ্রামের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আমার প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে আসে। কিন্তু তাদের যাতায়াতের রাস্তায় বুড়ি তিস্তার ওপর ব্রিজ না থাকায় শিক্ষার্থীদের মরণ ফাঁদ বাঁশের ভাঙা সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয়। অথবা তিন কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে আসতে হয়। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাই।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মোছা. নার্গিস ফাতিমা তোকদার বলেন, ‘আমার স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ওই পারের ব্রিজ না থাকায় আসা-যাওয়ার সমস্যা হচ্ছে, ব্রিজটা হলে সুবিধা হবে।’

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ওই স্থানে বুড়ি তিস্তার ওপর ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু টাকা বরাদ্দ না থাকায় ব্রিজটি নির্মাণ করা যাচ্ছে না। বরাদ্দ পেলে রাস্তাটিসহ ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মমিনুল ইসলাম বাবু/এএমকে