এডিট করা স্বেচ্ছাসেবক লীগের তালিকা দিয়ে সেই বিএনপি নেতাকে তুলে নেয় ডিবি
প্রযুক্তির কারসাজিতে সম্পাদিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি তালিকা ব্যবহার করে কুমিল্লার বরুড়ার এক বিএনপি নেতাকে তুলে নিয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কৌশলে এডিট করা সেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের মূল তালিকার কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই তালিকা এবং তৎকালীন পত্রিকার সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ৬ জুলাই বরুড়া উপজেলা কমিটির ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাঈফ উদ্দিন আহমেদ পাপ্পু এবং সাধারণ সম্পাদক মহসিন রহমান এই কমিটির অনুমোদন দেন। এতে বরুড়া উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাছির উদ্দিন মিহিরকে সভাপতি এবং বাপ্পি আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
বিজ্ঞাপন
অনুমোদিত ওই কমিটিতে ৭ জনকে সহ-সভাপতি, ২ জনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২ জনকে সাংগঠনিক সম্পাদকসহ মোট ২০ জনকে বিভিন্ন পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পদধারী নেতাদের তালিকা ক্রমানুসারে প্রিন্ট করা হয়। ১ নম্বরে সভাপতি এবং ৮ নম্বর পর্যন্ত সহ-সভাপতিদের নাম ও পদবি ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হয়।
৮ নম্বরের পর একটি ঘর ফাঁকা রেখে ৯ নম্বর ক্রমিকে সাধারণ সম্পাদক থেকে ১১ নম্বর ক্রমিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নাম ও পদবি উল্লেখ করা হয়। এরপর আবার একটি ঘর ফাঁকা রেখে ১২ নম্বর থেকে ১৪ নম্বর পর্যন্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম-পদবি দেওয়া হয় এবং পরবর্তী একটি ঘর ফাঁকা রেখে ১৫ নম্বর থেকে ২০ নম্বর পর্যন্ত ঘরগুলো পূরণ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
উপরে বর্ণিত তালিকাটি সঠিক বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন ওই তালিকায় থাকা একজন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা।
কিন্তু খুব কৌশলে ৮ নম্বরের পর যে ঘরটি ফাঁকা ছিল, সেখানে বিএনপি নেতা আব্দুল মোতালেবের নাম বসানো হয়। পদবির ঘরে সহ-সভাপতি এবং মোবাইল নম্বরের ঘরে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর যুক্ত করে একটি চক্র। এমন নিখুঁতভাবে তালিকাটি এডিট করা হয়েছে যে এটি সম্পাদিত বলে বোঝার কোনো উপায় নেই।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সঠিক তালিকার পদধারী এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, তালিকার সবাইকে আমি চিনি। তবে আব্দুল মোতালেব নামের ব্যক্তিকে চিনি না। তিনি আমাদের দলের কেউ নন।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালে বরুড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি অনুমোদনের সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক কুমিল্লার কাগজ। ওই সংবাদে কমিটির সব পদধারীর নামসহ ৭ জন সহ-সভাপতির নামও প্রকাশ করা হয়। সেখানেও আব্দুল মোতালেবের নাম পাওয়া যায়নি।
এদিকে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপি নেতা আব্দুল মোতালেবকে সদর দক্ষিণ থানার একটি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম।
এডিট করা তালিকা ব্যবহার করে কেন বিএনপির একজন পদধারী নেতাকে তুলে নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে জেলা পুলিশের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি তদন্তের জন্য এলাকায় পুলিশ গেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা আব্দুল মোতালেবের স্বজনরা।
আড্ডা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাফর উল্যাহ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পতিত স্বৈরাচারের রোষানলে দীর্ঘ সংগ্রামের একজন ত্যাগী নেতাকে কোনো খোঁজখবর না নিয়ে এভাবে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি। মোতালেবসহ তার পুরো পরিবার বিএনপি করে। এলাকায় খোঁজখবর নেওয়া উচিত ছিল।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মোতালেব বিএনপির একজন পদধারী নেতা। তার পারিবারিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। তারা ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসিয়ে থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে আব্দুল মোতালেব নামের এক বিএনপি নেতাকে রাতের আঁধারে তুলে নেয় ডিবি পুলিশ। আওয়ামী লীগ করতেন এমন অভিযোগে তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়। আটক হওয়া আব্দুল মোতালেব কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার আড্ডা ইউনিয়নের ছোট পুটিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি আড্ডা ইউনিয়ন বিএনপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আড্ডা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাফর উল্যাহ চৌধুরী, বরুড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন কল্লোল এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করে বলেন, আব্দুল মোতালেবের বিএনপির পদধারী নেতা।
আরিফ আজগর/এআরবি