ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি এলাকার লোকালয়ে বস্তায় বস্তায় ফেলা হয় ডিমের খোসা। দিনের পর দিন এ কাজটি করছে পোলট্রি বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ ফার্মস লিমিটেড। আর ওই এলাকায় এসব বর্জ্য পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডিমের খোসা, মৃত মুরগির বাচ্চাসহ বর্জ্যে সয়লাব উন্মুক্ত স্থানটি। তৈরি হয়েছে ডিমের খোসার স্তূপ। যেখানে দুর্গন্ধে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু যে দুর্গন্ধ তা কিন্তু নয়, ওইসব বর্জ্য পচে-গলে বৃষ্টির পানিতে মিশে গড়ায় আশাপাশের জলাশয়ে। এতে দূষিত হচ্ছে পানিও।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের করা ল্যাব টেস্টের রিপোর্টে জানা গেছে, ওই পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়েছে স্বাভাবিক মাত্রার থেকে ১৬ গুণ বেশি। যেখানে থাকার কথা ০.২৫ পিপিএম; সেখানে এখানকার পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ৪.০০ পিপিএম রয়েছে। এই অতিরিক্ত মাত্রার অ্যামোনিয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর জলজপ্রাণীর জন্য।

ডিমের খোসা, মৃত মুরগির বাচ্চাসহ বর্জ্যে পচে-গলে বৃষ্টির পানিতে মিশে গড়ায় জলাশয়ে

কিন্তু পরিবেশ দূষণের এ বিষয়টি তোয়াক্কাই করছে না ওই প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন ভ্যানে করে প্রায় এক টন করে এসব বর্জ্য ফেলে যায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

জসীম উদ্দিন পাঠান নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে ফার্মটি খোলা স্থানে এভাবে ডিমের খোসাসহ বর্জ্য ফেলে যাচ্ছে। এখানে যে কি পরিমাণ দুর্গন্ধ হয় সেইটা এইখানে না আসলে কেউ বুঝতে পারবে না। এইখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাটাই অসম্ভব হবে পড়ে। ঘরে বসে খাওয়ার সময়ও আমরা এই দুর্গন্ধে ঠিকমতো খেতেও পারি না। এই অবস্থায় আমরা আছি।

সাবিকুন নাহার নামে এক নারী বলেন, দুর্গন্ধের কারণে ঘরেও টেকা যায় না। ছেলেমেয়েরাও অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এর কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এইসব সমস্যার কারণেই আমরা রাত-দিন কাটাচ্ছি।

প্রতিদিন প্রায় এক টন করে এসব বর্জ্য ফেলে যায় নিউ হোপ ফার্মসের কর্মচারীরা

আতিক হাসান নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ওই বর্জ্যের কারণে আমার ফিশারির পানি নষ্ট হয়ে প্রায় সব মাছ মারা গেছে। আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলার দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেও কোনো সুরাহা পাইনি। এখন আমরা কার কাছে যাব?

আবু হানিফা নামে আরেক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোথাও তো কোনো সুরাহা পেলাম না। এখন এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এইসব বর্জ্য বস্তায় ভরে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে ফেলা হবে। তারাও তখন বুঝতে পারবে আমরা কী কষ্টে আছি। পরে যদি আমাদের দিকে তারা তাকায়।

বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য নিতে ওই প্রতিষ্ঠানে গেলে ফটকেই আটকে দেন নিরাপত্তাকর্মী। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে আসেন নি কোনো কর্মকর্তাও। দীর্ঘদিনের এ অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করেও তারা পাননি কোনো প্রতিকার।

এ নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা খাতুন বলেন, আমি এখনও ওই স্থানটি পরিদর্শন করিনি। না দেখে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।

তবে দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন পরিবেশ অধিদফতরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক ফরিদ আহমদ। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ। বিষয়টি জানা ছিল না। এখন যেহেতু জেনেছি, আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী শিগগিরই সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নেব।

এমএসআর