এগারো মাসে মাত্র ২৫ দিন ক্লাসে উপস্থিত থাকার কারণে এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার উপযুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেন শিক্ষক হাবিবুর রহমান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষকের ওপর হাতুড়ি দিয়ে হামলা চালান শিক্ষার্থীর বাবা। নির্মম এই ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম শাহাজান। তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার আড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার আড়পাড়া দরগা মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত শিক্ষক হাবিবুর রহমান কালীগঞ্জের শোয়াইবনগর কামিল মাদ্রাসার গণিতের শিক্ষক। তিনি উপজেলার মাজদিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বিশ্বাসের ছেলে।

মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক জানান, শোয়াইবনগর কামিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র আল সিয়াম গত ১১ মাসে মাত্র ২৫ দিন ক্লাসে উপস্থিত ছিল। এ কারণে শিক্ষকরা তাকে পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত নয় বলে মতামত দেন। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ওই শিক্ষার্থী তার পরিবারকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীর বাবা শাহাজান। শনিবার রাতে তিনি কালীগঞ্জ পৌর এলাকার আড়পাড়া দরগা মোড়ের সামনে অবস্থান নেন। ওই পথ দিয়ে শিক্ষক হাবিবুর রহমান যাওয়ার সময় শাহাজান তার পথরোধ করেন। একপর্যায়ে তিনি এলোপাতাড়ি হাতুড়ি দিয়ে শিক্ষককে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন।

স্থানীয়রা জানান, শাহাজান পেশায় একজন ট্রাকচালক। তিনি ইউনিলিভার কোম্পানির একটি গাড়ি চালান। শনিবার রাতে রাস্তায় শিক্ষক হাবিবুর রহমানের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তারা দেখতে পায়, শাহাজান হাতুড়ি দিয়ে শিক্ষককে মারধর করছেন। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে শাহাজান ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা আহত শিক্ষককে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

শোয়াইবনগর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিয়াম নিয়মিত ক্লাসে আসে না এবং তার পড়াশোনার মানও ভালো নয়। তার শ্রেণি রোল নম্বর ৩৪। কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষার উপযুক্ত না হলে তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া যায় না। কিন্তু বিষয়টি তার পরিবার মেনে নিতে পারেনি। এ কারণেই শ্রেণিশিক্ষক হাবিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে শিক্ষার্থীর বাবা শাহাজান। বিষয়টি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও শিক্ষা অফিসকে জানানো হয়েছে। প্রশাসন যদি দোষীদের বিচার না করে, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

জানা যায়, অভিযুক্ত শাহাজান এর আগেও সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশি তদন্তে সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শাহাজান।

ভুক্তভোগী শিক্ষক হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী আমাদের সন্তানের মতো। দায়িত্ববোধ থেকেই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি ও যোগ্যতার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। সিয়াম গত ১১ মাসে মাত্র ২৫ দিন ক্লাসে উপস্থিত ছিল। আমি শ্রেণিশিক্ষক হওয়ায় সিয়ামের পরিবার আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তার বাবা আমাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ করেছি।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাহাজানের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী আদুরি বেগম বলেন, শিক্ষকরা আমার ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। শিক্ষক হাবিবুর রহমান আমাদের পরিবার নিয়েও বিভিন্ন জায়গায় বাজে মন্তব্য করেছেন। মানুষ আমাদের এসব কথা জানিয়েছে। এসব কারণে রাগের বশে হয়তো শিক্ষক হাবিবুরকে মারধর করা হয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে কি না, আমি জানি না।

কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. মোফাজ্জল হক বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্ত শাহাজানকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পালিয়ে যান। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এআরবি