আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন আছে, রোগীরা যাচ্ছে পাশের জেলায়
লক্ষ্মীপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। এতে চিকিৎসাসেবার প্রধান সংকট জনবল। এ হাসপাতালে কেমিস্ট এনালাইজার মেশিনের অভাবে কিডনি, চর্বি ও লিভার পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। এতে বাইরের প্রাইভেট প্যাথলজি ও হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করতে গিয়ে রোগীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও নেই চিকিৎসকের পোস্ট।
এতে হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রামের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ৫০ শয্যা হিসেবে ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১৪ জন। হাসপাতালটিতে সোনোলজিস্ট/রেডিওলজিস্ট চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের বয়স নির্ধারণ ও আঘাতজনিত আহত রোগীদের ধরণ জানা যাচ্ছে না। এ জন্য রোগীদের নোয়াখালী জেলায় গিয়ে সেবা নিতে হয়।
বিজ্ঞাপন
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালে ম্যানুয়াল অ্যানালাইজার মেশিন ছিল। প্রায় ২৫ বছর ধরে মেশিনটি দিয়ে রোগীদের কিডনি, চর্বি ও লিভার পরীক্ষা চলছে। কিন্তু গত বছর মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। নতুন মেশিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এটি না আসা পর্যন্ত পরীক্ষাগুলো রোগীদের বাইরে করাতে হচ্ছে।
হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে সেবা চালানো হচ্ছে। স্কিন, নাক কান গলা, কার্ডিওলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট ও গাইনি কনসালট্যান্ট পদ শূন্য রয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকের পোস্টই নেই, তবে আছে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন। পরীক্ষাটির জন্য রোগীদের প্রাইভেট প্যাথলজি ও হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
হাসপাতালটির ল্যাবেও জনবল কম রয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে রক্তের ২২ রকম পরীক্ষার জন্য একটি নতুন হেমাটোলজি অ্যানালাইজার মেশিন রয়েছে। কিন্তু মেশিনটি স্থাপনের জন্য ঢাকা থেকে প্রকৌশলী আসার অপেক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এক্স-রে, ইসিজি মেশিন সচল রয়েছে ও রোগীদেরও নিয়মিত সেবা দেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
কর্তৃপক্ষ জানায়, কিডনি, চর্বি ও লিভারজনিত রোগের পরীক্ষা করতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। অনেক গরিব রোগী আসে, তাদের পক্ষে এত টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এ জন্য তাদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থাও করা হয়। তবে সদর হাসপাতালে পরীক্ষাটি করাতে পারলে, এদিক থেকে তারা অনেক উপকৃত হতো।
কয়েকজন রোগী জানান, চিকিৎসক কিডনি পরীক্ষার কথা বললেও হাসপাতালে করা যাচ্ছে না। এ জন্য বাইরে থেকে পরীক্ষা করার জন্য বলা হয়েছে। বাইরের প্যাথলজিতে পরীক্ষাটি করাতে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। এতে গরিব রোগীদের পক্ষে হয়ে ওঠে কষ্টসাধ্য।
তারা জানান, লক্ষ্মীপুরের প্যাথলজিগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অধিকাংশ রোগীই ভরসা রাখতে পারছে না। এ জন্য তারা নোয়াখালীতে যান। এতে রোগীদের সঠিক সময়ে চিকিৎসাসেবা দিতে দুর্ভোগে পড়তে হয় স্বজনদের। তবে এ হাসপাতালটি কার জন্য?
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে চিকৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাব রয়েছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে প্রায় ২০০ জন রোগী ভর্তি আছে। এ ছাড়া প্রতিদিন ৫০০ শতাধিক রোগীকে বহির্বিভাগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নতুন কেমিস্ট অ্যানালাইজার মেশিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি এলে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা যাবে। দ্রুত জনবল-সংকট দূর করা গেলে রোগীদের সেবা দিতে কোনো সমস্যা থাকবে না।
প্রসঙ্গত, জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০০৩ সালে সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয় হাসপাতালটি। এরপর ২০১৭ সালে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫০ শয্যার হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বর্তমানে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও জনবল বাড়েনি এখনো।
৫০ শয্যার জনবলেও রয়েছে সংকট। ২১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমানে আছে ১৪ জন। সিনিয়র স্টাফ নার্স ৫৯ জনের মধ্যে ৫১, স্টাফ নার্স ২৩ জনের মধ্যে চারজন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১৮ জনের মধ্যে আছে আটজন।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএ