তারেক রহমান দেশে ফেরা
মহাসচিবের জেলা ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকামুখী হাজারো বিএনপি নেতাকর্মী
দীর্ঘ ১৭ বছর। একটি প্রজন্মের রাজনৈতিক বেড়ে ওঠা। হতাশা আর প্রত্যাশার পুরো সময়জুড়ে যিনি দেশের বাইরে ছিলেন সেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এই আবেগের ঢেউ সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে ঘিরে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক ঢাকায় যাচ্ছেন। জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর উদ্যোগে শতাধিক মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাসের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলা-ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুর ও বালিয়াডাঙ্গী থেকে এসব পরিবহনে নেতাকর্মীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
দলীয় সূত্র জানায়, সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট ছোট বহরে নেতাকর্মীরা ঢাকামুখী যাত্রা শুরু করেছেন। কেউ যাচ্ছেন দলীয় পরিবহনে, কেউ আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে।
বিএনপির সাংগঠনিক রাজনীতিতে ঠাকুরগাঁও একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে বেশ পরিচিত। এই জেলা থেকেই উঠে এসেছেন দলের বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফলে এখানকার রাজনৈতিক তৎপরতা বরাবরই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আলাদা গুরুত্ব বহন করে। দলের কঠিন সময়ে যিনি মাঠে ও কণ্ঠে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই নেতার জেলা থেকেই তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সবচেয়ে বড় সাড়া দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে জেলা বিএনপির পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন মাঠপর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থাপনা, যাত্রাপথে শৃঙ্খলা এবং ঢাকায় গিয়ে সমবেত হওয়ার বিষয়গুলো তদারক করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয় টিম গঠন করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মালিক সমিতির সাবেক দপ্তর সম্পাদক নির্ণয় চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারেক রহমানের ১৭ বছর পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পরিবহন মালিক হিসেবে আমরা সেই চাহিদা পূরণে সহযোগিতার চেষ্টা করছি। এরইমধ্যে মিনিবাস-কোচ ৫০টি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের যাতায়াত যেন নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল হয়, সে জন্য বাস, মিনিবাস ও কোচগুলোর সময়সূচি ও রুট আগেভাগেই ঠিক করা হয়েছে। চালক ও সহকারীদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে যাত্রাপথে কোনো ধরনের ভোগান্তি না হয়।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব কামরুজ্জামান কামু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৭ বছর পর আমাদের নেতা দেশে ফিরছেন। এটা আমাদের দীর্ঘ লড়াই, ত্যাগ আর অপেক্ষার ফল। এই ১৭ বছরে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী মামলা, নির্যাতন ও কারাবরণের শিকার হয়েছেন। অনেকেই জীবনের সেরা সময়টা রাজপথে কাটিয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সেই সব ত্যাগের একটি নৈতিক স্বীকৃতি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেক নেতাকর্মী আছেন, যারা ১৭ বছরে তারেক রহমানকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পাননি। আজ সেই সুযোগ আসছে এটা তাদের জন্য আবেগের, গর্বের ও অনুপ্রেরণার বিষয়।
ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফোরাতুন নাহার প্যারিস বলেন, আমাদের নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপির নারী নেতাকর্মীদের জন্য বিশেষভাবে আবেগঘন একটি মুহূর্ত। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দলের আন্দোলন-সংগ্রামে নারী নেতাকর্মীরা নীরবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে পাশে ছিলেন। অনেকেই পরিবার, সমাজ ও নানা চাপের মধ্যেও রাজনীতি চালিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা আমাদের সেই ত্যাগ ও অপেক্ষার প্রতিফলন। নারী নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। আমরা মনে করি, এই প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করবে। মহাসচিবের জেলা হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের নারী নেতাকর্মীরাও সংগঠিতভাবে ঢাকায় যাচ্ছেন। আমরা শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলিতভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরতে চাই।
ঠাকুরগাঁও জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মো. জাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যারা রাজনীতিতে এসেছি তাদের একটি বড় অংশ কখনো তারেক রহমানকে দেশে দেখার সুযোগ পায়নি। তিনি আমাদের কাছে শুধু একজন নেতা নন, একটি প্রেরণার নাম। ১৭ বছর ধরে দেশের বাইরে থেকেও যিনি দলের প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রাম ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২৫ ডিসেম্বর সেই নেতা দেশে ফিরছেন এটা আমাদের জন্য আবেগের পাশাপাশি নতুন করে সাহস পাওয়ার মুহূর্ত।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যে নেতা দেশের বাইরে থেকেও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মানসিক ও রাজনৈতিকভাবে যুক্ত ছিলেন। আজ তার দেশে ফেরা আমাদের জন্য আত্মবিশ্বাসের জায়গা। এই কর্মসূচিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে আবেগ যেমন রয়েছে, তেমনি দায়িত্ববোধও আছে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি যেন কোনোভাবেই কলুষিত না হয়। তাই নেতাকর্মীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শান্তিপূর্ণ, শৃঙ্খলিত ও আইনসম্মতভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিতে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিএনপির রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক ও আবেগঘন অধ্যায়। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যিনি দেশের বাইরে থেকেও দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন এবং প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী নেতাকর্মীদের যাতায়াত, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এই উপস্থিতি শুধু সংখ্যার নয়, এটি বিশ্বাস, আস্থা ও দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। তবে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না কত হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় যাবেন। কেননা অনেকেই আগেই চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জেলা হিসেবে ঠাকুরগাঁও সব সময় দলের কঠিন সময়ে অগ্রভাগে ছিল। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় আমরা চাই, ঢাকায় গিয়ে শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলিত উপস্থিতির মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক শক্তি ও ঐক্য তুলে ধরতে। আর মহাসচিবের জেলা থেকে হাজারো নেতাকর্মীর ঢাকামুখী যাত্রা প্রমাণ করে দল এখনো মাঠে শক্ত অবস্থানে আছে।
আরকে